পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। গত শনিবার রাতে নতুন পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১২০–১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও রোববার সকালে তা নেমে আসে ৬০–৭০ টাকায়। পুরোনো পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৩০–৪০ টাকা কমে ১০০–১১০ টাকায় পৌঁছায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির খবর বাজারে দ্রুত প্রভাব ফেলেছে এবং এই ধারা আরও কয়েকদিন চলতে পারে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দাম বাড়লেও বিক্রি ভালো ছিল। কিন্তু শনিবার ভোর থেকেই চাহিদা কমে যায়। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা এবং আমদানির ঘোষণার পর রাত থেকেই দামে পতন শুরু হয়। রোববার দুপুরে পুরোনো পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০–৪০ টাকা কমলেও ক্রেতা কমে গেছে। নতুন পেঁয়াজের দামও অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কারওয়ান বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, দাম কমে যাওয়ায় ২০ বস্তা পেঁয়াজে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত দুদিন দাম বেশি থাকলেও চাহিদা ভালো ছিল। কিন্তু এখন দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাও কমে গেছে।
খুচরা বাজারেও একই প্রভাব দেখা গেছে, যদিও পাইকারি হারে দাম কমেনি। এখনও খুচরা বাজারে পুরোনো পেঁয়াজ ১২০–১৩০ টাকায় এবং নতুন পেঁয়াজ ৯০–১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে পুরোনো পেঁয়াজ ১৪০–১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ী মাহফুজ বলেন, দাম কমলেও ক্রেতা কম। যে কারণে খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকেই লোকসানের মুখে পড়ছেন। কয়েক দিনের মধ্যে দাম আরও কমতে পারে বলে তিনি আশা করছেন।
একই বাজারের ব্যবসায়ী মতিয়ার হোসেন বলেন, মেহেরপুর থেকে হাইব্রিড ও দেশি জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমেছে। এর সঙ্গে আমদানির খবরও বাজারে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করেছে।
এর আগে সরবরাহ সংকটের কারণে শুক্রবার রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ১৬০ টাকায় পৌঁছায়। এরপরই সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে শনিবার রাতে আমদানির ঘোষণা দেয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম জানান, রোববার ৫০ জন আমদানিকারককে অনলাইনে আইপি (আমদানি অনুমতি) দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আইপি অনুমতিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ রয়েছে।
শনিবার রাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সীমিত পরিসরে আমদানি শুরু হবে। চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে যারা আবেদন করেছিলেন তারা পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন জানান, আমদানির খবরেই একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজে ৪০–৫০ টাকার দরপতন প্রমাণ করে বাজারে প্রভাবশালী একটি গ্রুপ কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিল। তিনি দাবি করেন, ওই একই গ্রুপ ২০০ টাকার ওপরে দাম উঠানোর হুমকিও দিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, দেশে এখনো প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন পুরোনো পেঁয়াজ কৃষকের হাতে রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আরও আড়াই লাখ টন নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। ফলে কারসাজি করে দাম বাড়ানো এখন আর সম্ভব হবে না।
কেন পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার বাধ্য হয় আমদানির অনুমতি দিতে। প্রকৃতপক্ষে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আছে।
তিনি আরও জানান, এ বছর সরকারিভাবে ৪ হাজার এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ১৫ হাজার হাই-ফ্লো মেশিন কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর এই সংখ্যা ৩০ হাজারে উন্নীত হবে, যা দিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ সম্ভব হবে। ফলে বছরের শেষভাগে সিন্ডিকেটের প্রভাব আরও কমবে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ টন। গত বছর দেশে ৪ লাখ টনের কিছু বেশি এবং তার আগের বছর সাড়ে সাত লাখ টনের মতো পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল।
