জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সঙ্গে হামলাকারীদের যোগসূত্রের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রাথমিক তদন্তে সম্রাট-ঘনিষ্ঠ একটি চক্র এ হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যুক্ত ছিল বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হামলার আগে ও পরে সন্দেহভাজনদের ফোনালাপ, অবস্থান (লোকেশন) এবং আর্থিক লেনদেন বিশ্লেষণ করে সম্রাটের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে হামলার কয়েকদিন আগে একাধিকবার বিদেশ থেকে আসা কল ও মেসেজের সূত্র পাওয়া গেছে, যেগুলো সম্রাটের পরিচিত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত নম্বরের সঙ্গে মিল রয়েছে।
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে গুলিবর্ষণকারী হিসেবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাডার ফয়সাল করিম মাসুদকে শনাক্ত করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের পেছনে বসে গুলি করা ব্যক্তির চেহারা ও শারীরিক গড়ন ফয়সালের সঙ্গে মিলে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও পালানোর রুট আগেই নির্ধারণ করা হয়েছিল—যা পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত দেয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি ও জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে। হাদিকে লক্ষ্য করে দীর্ঘদিন রেকি করা হয়। শুক্রবার ছুটির দিনে সড়ক তুলনামূলক ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে হামলা চালানো হয়।
হামলার পরপরই সন্দেহভাজনরা দেশ ছাড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় সব বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং ফয়সালসহ মোটরসাইকেলে থাকা অপর ব্যক্তিকে ধরতে একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সম্রাটের নেটওয়ার্কে থাকা পরিচিতজনদের গতিবিধিও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পূর্বের মামলাগুলোর নথি ও সাম্প্রতিক আর্থিক লেনদেন মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎসও খতিয়ে দেখা হচ্ছে—বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র আছে কি না।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় আমরা একাধিক দিক থেকে তদন্ত করছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিড পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।” র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, “আমরা ছায়া তদন্ত করছি এবং গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।”
এদিকে, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থী ও আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেছেন, “প্রাইম সাসপেক্ট শনাক্ত হয়েছে। জনগণের সহযোগিতায় দ্রুত অগ্রগতি আশা করছি।”
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পল্টন থানা পুলিশ।
