রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘ এক যুগ ধরে শিক্ষকতা করে চলেছেন এক অধ্যাপক, যিনি নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণই করেননি। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ড. ইমদাদুল হকের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূবিদ্যা অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি আরও একবার বিভাগীয় প্রধানের পদে ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ড. ইমদাদুল হক ২০০৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে ২০১৪ সালে বেরোবির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি ২০১২ সালে একই বিভাগে অ্যাডহক ভিত্তিতে (অস্থায়ী) শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত
২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর দুটি জাতীয় দৈনিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। মোট ১৪টি বিভাগের জন্য এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। এতে ১৪ নম্বর ক্রমিকে ছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন প্রভাষক নিয়োগ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।
স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের যেকোনো একটিতে (৪.০০ ভিত্তিক স্কেলে) কমপক্ষে ৩.৫০ সিজিপিএ অথবা ডিভিশনভিত্তিক পদ্ধতিতে প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে।
এসএসসি বা এইচএসসিতে ন্যূনতম প্রথম বিভাগ বা ‘এ’ গ্রেড থাকতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার গরমিল
ড. ইমদাদুল হকের জমা দেওয়া আবেদনপত্র ও সনদপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি ১৯৯৮ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ (৬৪৩ নম্বর) পেয়েছিলেন। ২০০৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক ও ২০০৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তাঁর স্নাতকে সিজিপিএ ছিল ৩.২৬ এবং স্নাতকোত্তরে ছিল ৩.৩৯ (৪.০০ স্কেলে)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, তার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর যেকোনো একটিতে সিজিপিএ ৩.৫০ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল, যা তিনি পূরণ করেননি। তা সত্ত্বেও, তিনি তার আবেদনপত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয়কেই ‘প্রথম বিভাগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা তথ্যগতভাবে বিভ্রান্তিকর।
উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্রেডিং সিস্টেম চালু হয়, বিশেষ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ্ধতি চালু ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, “একজন ব্যক্তি যখন প্রাথমিক শর্তই পূরণ করেন না, তখন তার আবেদন গ্রাহ্য হওয়ার কথা নয়। অথচ সেই ব্যক্তি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, এটি সত্যিই লজ্জার। এ নিয়োগ নিয়ে ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে নানা আলোচনা চলছে।”
অভিযুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
এ বিষয়ে ড. ইমদাদুল হক বলেন, “হ্যাঁ, আমার নম্বরের কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে আমি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ীই আবেদন করেছি। সেই সময় বুয়েট, সাস্ট ও খুবিতে সেমিস্টার সিস্টেম চালু ছিল। আমার ইকুইভ্যালেন্স সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার শর্ত পূরণ হয়েছে এবং সেই অনুযায়ীই আবেদন করেছি। যদি আমার নথিপত্রে ভুল থাকতো, তাহলে প্রশাসন চাকরি দিত না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, তারপর জানাতে পারবো।”
উপাচার্য ড. শওকত আলী বলেন, “আমি এসব বিষয়ে জানি না। খোঁজ নিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম অনেক শিক্ষক আছে যাদের এই রকম সমস্যা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এগুলো নিয়ে কাজ করছি। তবে সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”