বাংলাদেশের বেসরকারি জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড তুরস্কে সাড়ে পাঁচ হাজার ডেডওয়েট টনের (ডিডব্লিউটি) অত্যাধুনিক বহুমুখী জাহাজ ‘ওয়েস ওয়্যার’ রপ্তানি করতে যাচ্ছে।
শনিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মেঘনা ঘাটে অবস্থিত নিজস্ব কারখানা থেকে জাহাজটি পাঠানো হবে। আগামী রবিবার জাহাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে তুরস্কের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘নোপ্যাক শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেড’–এর কাছে।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রমিজ সেন।
আনন্দ শিপইয়ার্ড জানায়, আন্তর্জাতিক মান ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ‘ওয়েস ওয়্যার’–এর দৈর্ঘ্য ৩৪১ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট ও গভীরতা ২৫ ফুট। এটি ২,৭৩৫ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন দ্বারা চালিত এবং প্রতি ঘণ্টায় ১২ নট গতিতে ৫,৫০০ টন পণ্য বহন করতে সক্ষম। ইস্পাতের কয়েল, কয়লা, সার, খাদ্যশস্য ও রাসায়নিক পদার্থসহ নানাবিধ পণ্য পরিবহনে জাহাজটি ব্যবহার করা যাবে।
এর আগে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের এনজিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেড–এর কাছে ৬,১০০ ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ রপ্তানি করেছিল, যা সে সময় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া অন্যতম বৃহৎ জাহাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা গেলে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণ ও রপ্তানির মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি, সমুদ্রকেন্দ্রিক শিল্প গড়ে উঠলে ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীলতাও কমে আসবে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তারা দেশি–বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ৩৫০টিরও বেশি জাহাজ সরবরাহ করেছে। ২০০৮ সালে ডেনমার্কে কনটেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রপ্তানির মাধ্যমে আনন্দ শিপইয়ার্ড বাংলাদেশের প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর জার্মানি, নরওয়ে, মোজাম্বিক, যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশে জাহাজ রপ্তানি করেছে তারা।
প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি পরিচালক ড. নাজমা নওরোজ জানান, জাহাজটির নির্মাণকাজ শেষে সব ধরনের যান্ত্রিক পরীক্ষা ও সি-ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করা বাকি।
দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ফলে গত দেড় দশকে বাংলাদেশ বিশ্বে উদীয়মান জাহাজ নির্মাণ জাতি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশ থেকে অন্তত ৫০টি জাহাজ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে।