২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিরা ক্ষমতা দখল করে। এ ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক বিদেশি শক্তির ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের পর হাজারো সংখ্যালঘু হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হন। বর্তমানে আইএসআইএস-ধাঁচের সংগঠনগুলো প্রকাশ্যে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভূরাজনৈতিক কারণে পশ্চিমা বিশ্ব এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে।
গত শনিবার দিল্লিতে আয়োজিত বহুল আলোচিত বাংলাদেশবিষয়ক এক সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরেন বক্তারা। সেমিনারের শিরোনাম ছিল— “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রভাব”। দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স নিউজ এ আয়োজন করে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় ভারতকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আসন্ন নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইকুইপমেন্ট ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মনোরাজ সিং মান। এতে ভারতের সামরিক কর্মকর্তারা, থিঙ্ক ট্যাঙ্কে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা এবং চারজন বাংলাদেশি রিসোর্স পারসন অংশ নেন। তবে বাংলাদেশিরা সরাসরি উপস্থিত না থেকে অনলাইনে যুক্ত হন। এরা হলেন— সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, একাডেমিক ড. আবুল হাসনাত মিল্টন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
সেমিনারে বক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা, জঙ্গিবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন। অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনা ছিল একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ, যেখানে শেখ হাসিনার পতনকে টার্গেট করা হয়েছিল। অন্যদিকে কয়েকজন বক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রাখার ওপর জোর দেন।
আলোচনায় উঠে আসে—
-
জঙ্গি সংগঠনের উত্থান বাংলাদেশে নতুন নিরাপত্তা সংকট তৈরি করছে।
-
সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চলছে।
-
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
-
ভবিষ্যৎ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ সব দলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
সেমিনারের ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সবসময় ঘনিষ্ঠ ছিল। তবে সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সম্পর্ক এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে।