পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর)–এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে সেনাবাহিনী, ক্রমেই চরমপন্থি রাজনৈতিক মতাদর্শে চালিত হচ্ছে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জিও নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, জার্মান সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তান-ভারতের বিরোধের মূল কারণ হলো কাশ্মীর ইস্যু, ভারতের রাষ্ট্র-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ এবং হিন্দুত্ববাদী উগ্র চিন্তাধারার উত্থান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের অহংকার ও অযৌক্তিক কৌশল মেনে নেওয়া উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক শক্তিগুলোকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
পাকিস্তানে বিদ্রোহ নয়, সন্ত্রাস
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফের দাবি, পাকিস্তানে বিদ্রোহ নয়, বরং পরিকল্পিত সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। বেলুচিস্তান থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া—সব জায়গায় ভারতের মদদ স্পষ্ট। তিনি জানান, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পাকিস্তান ছয়টি ডসিয়ার আন্তর্জাতিক মহলে উপস্থাপন করেছে, যাতে ভারতের সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে।
চলতি বছর পাকিস্তানজুড়ে প্রায় ৪৭ হাজার ৯০০ গোয়েন্দা অভিযানে এক হাজারের বেশি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে এবং ৭৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন—যার মধ্যে প্রায় ৩০০ সাধারণ নাগরিক। তিনি বলেন, “যদি এগুলো দেশীয় সমর্থনেই সীমিত থাকত, এতদিনে শেষ হয়ে যেত। ভারতের বাহ্যিক সহায়তা ছাড়া এসব সম্ভব নয়।”
আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার
আইএসপিআর প্রধানের দাবি, ভারত আফগানিস্তানকে ঘাঁটি বানিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং বিএলএ ও টিটিপি–কে ব্যবহার করছে। তবে পাকিস্তান কখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসে মদদ দেয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক সম্পর্ক
পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র জানান, ওয়াশিংটন অতীতে পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা কমাতে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে। ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখছে। তিনি বলেন, “আমরা সম্পর্ককে কখনো ‘অথবা-অথবা’ হিসেবে দেখি না।”
এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা সেনাদের ফেলে যাওয়া ৭.২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অস্ত্রশস্ত্র এখন বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছেছে।
ভারতের ভেতরের সমস্যা বাইরে চাপানো
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ ভারতের ভেতরে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়নের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “কাশ্মীরে ১০ লাখেরও বেশি ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। ঘরে ঘরে তল্লাশি চলে। অথচ এর দায় চাপানো হয় পাকিস্তানের ওপর। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে বাইরে চাপানোর কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।”