প্রায় সাড়ে তিন দশক পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার এই আয়োজনকে ঘিরে যখন ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তখনই নতুন করে ‘পোষ্য কোটা’ ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি, মনোনয়ন ফরম বিতরণে দফায় দফায় বিলম্ব, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং সর্বশেষ পোষ্য কোটার পুনর্বহাল—এসব পদক্ষেপই নির্বাচনী প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার সংগঠিত চেষ্টার অংশ।
১৯৮৮ সালের পর এটাই প্রথম রাকসু নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা এতে ব্যাপক আগ্রহ দেখালেও নানা জটিলতায় নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। কখনো তফসিল ঘোষণায় দেরি, কখনো মনোনয়ন ফরম বিতরণ স্থগিত, কখনো আবার হামলা-সংঘর্ষে কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সর্বশেষ ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্তে শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল হওয়ায় আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। এতে মিছিল, অবরোধ, অনশন থেকে শুরু করে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও পর্যন্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ পোষ্য কোটার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন, যার ফলে তফসিল ঘোষণা পেছানো হয় এবং মনোনয়ন বিতরণ বারবার স্থগিত হয়। পরে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করেও ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর পোষ্য কোটা পুনর্বহালের ঘোষণা আসার পর টানা দুদিন শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। আন্দোলনের ফলে ক্যাম্পাস কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে বিভেদ তৈরি করছে। ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনও এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাকসুর ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “পোষ্য কোটা বহু আগেই মীমাংসিত একটি ইস্যু। নির্বাচন ঘিরে এটাকে সামনে আনা মানে হলো ষড়যন্ত্র। আমরা নির্বাচন যেভাবেই হোক সফলভাবে সম্পন্ন করতে চাই।”
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, “এটা সুস্পষ্টভাবে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বানচালের কৌশল। আমরা চাই ২৫ তারিখেই ভোট হোক, অন্যথায় আমরা কঠোর অবস্থান নেব।”
ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান মনে করেন, “এ ষড়যন্ত্র কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেই নয়, বাইরে থেকেও হতে পারে। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নির্বাচনপূর্বে আনা উচিত হয়নি।”
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোববার জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পোষ্য কোটা পুনর্বহাল স্থগিত করেছে। তবে এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সোমবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তাদের দাবি, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা থাকলেও রাজশাহীতে তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যদিও তারা জানিয়েছে, রাকসু নির্বাচন এ কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে।