সিআইএ এজেন্ট পরিচয় দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম রিমান্ডে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গে তার সাত বছর ধরে যোগাযোগ রয়েছে। দেশে এলেই তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। তার মতে, রাষ্ট্রপতি তাকে বিশ্বাস করতেন এবং দেশি-বিদেশি নানা তথ্য জানতে চাইতেন। তদন্ত কর্মকর্তারা শুরুতে অবাক হলেও যাচাই-বাছাই শেষে এ তথ্যের সত্যতা পান।
মার্কিন দূতাবাসের তৎপরতা
এনায়েতের বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কারণ তিনি নিজেকে সিআইএ ও দক্ষিণ এশীয় পরিচালকের ভুয়া পরিচয় দিয়েছিলেন।
ষড়যন্ত্র ও যোগাযোগ
তদন্তে জানা যায়, দেশে এসে এনায়েত প্রথমে দেখা করেন গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের পরিচয়ে তারা স্কাইপিতে কথা বলতেন। এনায়েত তাকে জানিয়েছিলেন—খুব শিগগিরই ড. ইউনূস সরকার উৎখাত হবে, জাতীয় সরকার গঠিত হবে এবং সেনাসমর্থিত উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। আবু আলমকে সেই পরিষদে জায়গা করে দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।
এছাড়া, তিনি হুন্ডির মাধ্যমে টিকিটের টাকা নেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন এবং জাতীয় সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার লোভ দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
ওয়ান-ইলেভেনের ছায়া
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওয়ান-ইলেভেনের (২০০৭) কুশীলবরাও সক্রিয়। তাদের লক্ষ্য আবারও জরুরি সরকার বা জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে থাকায় এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
গ্রেপ্তার ও রিমান্ড
১৩ সেপ্টেম্বর মিন্টো রোডে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় পুলিশ এনায়েতকে আটক করে। নিজেকে সিআইএ এজেন্ট পরিচয় দিলে তাকে ও সহযোগীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালত প্রথমে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ডিবি আবার রিমান্ড চেয়েছে, কারণ তিনি অনেক তথ্য গোপন করেছেন।
ডিবির ডিসি (রমনা) ইলিয়াস কবীর জানান, “এনায়েতের সঙ্গে হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের যোগাযোগ ছিল এবং তিনি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। তাই আবারও রিমান্ড প্রয়োজন।”
রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা
সূত্রে জানা যায়, এনায়েত একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তবে তারা অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এছাড়া, তিনি ‘আম জনতার পার্টি’তে ৫০ লাখ টাকা ও ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এ আরও ৫০ লাখ টাকা ফান্ড দিয়েছেন বলে দাবি করেন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ওই পার্টির আত্মপ্রকাশের খরচও তিনি বহন করেন।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর সঙ্গে তার পরিচয় ও যোগাযোগ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও তিনি কলিমুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং তার তথ্য টেলিভিশনের টকশোতে ব্যবহার করতেন।
ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট
১৯৮৮ সালে এনায়েত যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ২০০৪ সালে মার্কিন পাসপোর্ট পান। বর্তমানে তিনি পেনসিলভানিয়ায় পরিবার নিয়ে থাকেন। সেখানে তার মুদি দোকান ও গরুর খামার রয়েছে। অতীতেও তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
ওয়ান-ইলেভেনের সক্রিয় মহল
সূত্র বলছে, ২০০৭ সালের জরুরি সরকারের সময়কার কিছু প্রভাবশালী এখন আবার সক্রিয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠাতা, স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ, কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা ও একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। তাদের লক্ষ্য নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে বিকল্প প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা।