ভারতের উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ব্যানারকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের হয়রানি ও গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন) উপলক্ষে শোভাযাত্রায় ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে কানপুর থেকে শুরু করে লক্ষ্ণৌ, উন্নাও, বহরাইচ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত ও মুম্বাই পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
কানপুরে এফআইআর ও অভিযোগ
কানপুরে একটি মিছিলে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ব্যবহারের পর পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে যে মুসলিমরা নতুন প্রথা চালু করছে, যা সম্প্রদায়ভিত্তিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত সরাসরি ব্যানারকে কেন্দ্র করে মামলা হয়নি। বরং অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে—নির্ধারিত স্থানের বাইরে প্যান্ডেল তৈরি ও শোভাযাত্রায় পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও স্থানীয় মুসলমানদের দাবি, বিষয়টি অযথাই বড় করা হচ্ছে এবং মূলত ব্যানারকেই টার্গেট করা হচ্ছে।
উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভ ও গ্রেফতার
বিষয়টি ঘিরে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
লক্ষ্ণৌতে সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রানা নারীদের নিয়ে রাজ্য বিধানসভা সামনে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। সেখানে ব্যানার হাতে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের জোর করে সরিয়ে দেয়।
উন্নাওতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে অন্তত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বহরাইচ ও কাশীপুরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
অন্য রাজ্যে প্রতিবাদ
উত্তরাখণ্ড, গুজরাতের গোধরা এবং মুম্বাইয়েও একই ইস্যুতে বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও এফআইআর, কোথাও গ্রেফতার আবার কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে।
মানবাধিকারকর্মী ও মুসলিম সংগঠনগুলোর অভিযোগ
মানবাধিকারকর্মী ও মুসলিম সংগঠনগুলো বলছে—
অতি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে।
সাংবিধানিক ধর্মীয় অধিকার চর্চার সুযোগ সীমিত করা হচ্ছে।
নবী মুহাম্মদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে, অথচ অন্য সম্প্রদায়ের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে সরকার ও প্রশাসন নীরব থাকে।
বিজেপির অবস্থান
অন্যদিকে বিজেপি নেতারা বলছেন—
কারও ধর্মবিশ্বাসকে টার্গেট করা হচ্ছে না।
কেবল আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অনুমতি ছাড়া মিছিল বা ব্যানার টাঙানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ
এই বিতর্ক ঘিরে সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেক মুসলমান তাদের প্রোফাইল পিকচারে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা পোস্টার ব্যবহার করছেন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন ছোট ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের আলাদা করে দেওয়ার মানসিকতা আরও গভীর হচ্ছে। এতে ভারতীয় সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজন বাড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের সামাজিক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।