নিম্নে আপনার দেওয়া লেখাটির পুনর্লিখিত সংস্করণ দেওয়া হলো — ভাষা সুসঙ্গত ও প্রাঞ্জল রেখে মূল তথ্য অপরিবর্তিত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে:
দীর্ঘ ১৮ বছর অবরোধের মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনি অঞ্চল গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুক্রবারে ৭২৮তম দিনে পৌঁছেছে। দুই দফা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছাড়া ইসরাইলি সামরিক আক্রমণ মূহূর্তের জন্যও থেমে নেই; এতে উপত্যকাটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই ছবিটা উঠে এসেছে।
এই দুই বছরের আগ্রাসন বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে ২০ দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। পরিকল্পনায় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসকে অস্ত্রসমর্পণ এবং যুদ্ধকাজে ব্যবহৃত অবকাঠামো ধ্বংস করতে বলা হয়েছে; একই সঙ্গে বলা হয়েছে নতুন শাসন কাঠামোয় হামাসকে কোনো স্থান দেওয়া হবে না।
হামাস জানায়, তারা সতর্কতার সঙ্গে এই প্রস্তাব বিবেচনা করছে এবং সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছু সময়চাইছে। পরিকল্পনা প্রকাশের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন হামাস তিন‑চার দিনের সময় পেতে পারে মতামত জানাতে।
তারপরও ট্রাম্প ইসরাইলকে গাজায় বোমাবর্ষণ দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন—বিশেষত হামাস কিছু শর্ত মেনে জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তাব দেওয়ার পর এই আহ্বানটি তীব্র হয়েছে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রধান বিন্দুগুলো সংক্ষেপে নিচে দেয়া হল —
-
গাজা চরমপন্থা ও সন্ত্রাসমুক্ত করা যাবে যাতে এটি প্রতিবেশীর জন্য হুমকি না হয়।
-
গাজার দরিদ্র জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্ত করে উন্নয়ন করা হবে।
-
সব পক্ষ যদি প্রস্তাব মেনে নেয়, যুদ্ধ তৎক্ষণাত থামবে; জিম্মি মুক্তির সম্মতি হলে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা থেকে প্রত্যাহার করবে; আকাশ ও স্থলপথে সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে।
-
চুক্তি মেনে নেয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইল গাজার সব জীবিত ও মৃত জিম্মি ফেরত দেবে।
-
সব জিম্মি মুক্তির পর ইসরাইলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জন ও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে আটক থাকা ১,৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেওয়া হবে; মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে নারী ও শিশু থাকবে; পাশাপাশি মৃত জিম্মিদের বিনিময়ে মৃত গাজাবাসীদের দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে (প্রতি ১ জন ইসরাইলি মৃত জিম্মির বিনিময়ে ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর দেহ)।
-
জিম্মি প্রত্যাবর্তনের পর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং অস্ত্রসমর্পণকারী হামাস সদস্যদের ক্ষমা করা যেতে পারে; যারা গাজা ছাড়তে চান তাদের নিরাপদে অন্য দেশে পাঠানো হবে।
-
চুক্তি মেনে নেয়ার পর গাজার ওপর পুরোপুরি মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে—পানী, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশনসহ অবকাঠামো পুনঃস্থাপন, হাসপাতাল ও বেকারি গঠন, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও রাস্তা খোলার জন্য সরঞ্জাম পাঠানো হবে (মানবিক সহায়তার সময়রেখা হিসেবে ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে)।
-
ত্রাণবিতরণে জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা দায়িত্বে থাকবে; রাফাহ সীমান্ত দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে (১৯ জানুয়ারি ২০২৫ চুক্তির অংশ হিসেবে)।
-
অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠনকৃত অন্তর্বর্তী সরকার গাজা পরিচালনা করবে; একটি অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি দৈনন্দিন পরিষেবা দেখভাল করবে; ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তী কমিটি তত্ত্বাবধান করবে, যার প্রধান হবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—টনি ব্লেয়ারের মতো পরিচিত ব্যক্তিরাও এতে থাকবেন; এই কমিটি গাজার পুনর্গঠন তহবিল পরিচালনা করবে এবং গাজার শাসন সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালাবে।
-
গাজার পুনর্গঠনে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল গঠন করা হবে।
-
অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।
-
কাউকে জোর করে গাজা থেকে বের করা হবে না; স্বেচ্ছায় চলে যেতে ইচ্ছুকরা যেতে পারবেন এবং ফিরে আসতেও পারবেন; সবাইকে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হবে এবং উন্নয়নে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে।
-
গাজার শাসনে হামাস ও অন্যান্য সংগঠনকে অংশ নিতে দেয়া হবে না; সব টানেল ও অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করা হবে; নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গাজা নিরস্ত্রীকরণ করা হবে; নতুন গাজার লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থা।
-
আঞ্চলিক অংশীদাররা নিশ্চয়তা দিবে যে নতুন গাজা প্রতিবেশী বা নিজেদের জনগণের জন্য হুমকি হবে না; তারা হামাস ও অন্যান্য দলের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে।
-
গাজায় মোতায়েনের জন্য একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থবিরীকরণ বাহিনী (আইএসএফ) গঠন করতে যুক্তরাষ্ট্র তার আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে; ফিলিস্তিনি পুলিশ গঠন ও প্রশিক্ষণে সহায়তা করবে; সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েল ও মিশরের সঙ্গে সমন্বয় করবে।
-
ইসরাইল গাজা দখল বা একীকরণ করবে না; আইএসএফ স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পর আইডিএফ চুক্তি মোতাবেক সরে যাবে।
-
যদি হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বা বাস্তবায়নে উল্টো সাইন করে, আইডিএফ তখন সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা আইএসএফের হাতে হস্তান্তর করবে।
-
সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থার ভিত্তিতে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ শুরু করা হবে।
-
যতদিন গাজা পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কার চলবে, ততদিন ফিলিস্তিনের স্বশাসন ও রাষ্ট্রগঠনের পথের শর্তগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলবে।
-
যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থার জন্য যৌথ আলোচনার ব্যবস্থাও করবে।