অনেকে মনে করেন, টকজাতীয় ফল যেমন জলপাই কেবল নারীরাই খান বা এটি তাদের জন্য বেশি উপযোগী। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ছোট্ট এই সবুজ ফলটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যই এক অনন্য পুষ্টির উৎস। জলপাইয়ে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ এমন অনেক উপাদান, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলপাই শুধুমাত্র আচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সালাদ, স্মুদি, এমনকি রান্নাতেও ব্যবহার করা যায়। জলপাই তেল বা অলিভ ওয়েল এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় রান্নার উপাদান। তবে অতিরিক্ত নোনতা বা তেলে ভাজা আচার খাওয়া ঠিক নয়, বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
চলুন জেনে নিই, জলপাই আমাদের শরীরের কী কী উপকার করে—
প্রথমত, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। জলপাইয়ে আছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা ‘ভালো ফ্যাট’ হিসেবে পরিচিত। এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়, ফলে হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
দ্বিতীয়ত, প্রদাহ কমায়। ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশন’-এর গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাইয়ের পলিফেনল ও ওলিওকান্থাল শরীরের প্রদাহবিরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এগুলো ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে কোষকে রক্ষা করে।
তৃতীয়ত, ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী। জলপাইয়ে থাকা ভিটামিন ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে, বার্ধক্যের ছাপ কমায় এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে। পাশাপাশি জলপাই তেল চুলকে মজবুত ও উজ্জ্বল করে তোলে।
চতুর্থত, হজমে সহায়তা করে। জলপাইয়ের প্রাকৃতিক ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এটি অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজমশক্তি উন্নত করে।
পঞ্চমত, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। ‘জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন’-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাইয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে জলপাই খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখা, এমনকি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাই জলপাইকে শুধু আচার নয়—একটি দৈনন্দিন স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবেও দেখা উচিত।







