ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর সাড়ে ৯ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের সমর্থন এবং সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের ভিত্তিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিলো গণহত্যার বিচার,
– মতিউর রহমান আকন্দ
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর সাড়ে ৯ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের সমর্থন এবং সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের ভিত্তিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিলো গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সংস্কার ও নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য-অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন গঠন করে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন রাজনৈতিক সরকার নয়। তাই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই। এ সরকার নির্বাচনের আয়োজন করার মাধ্যমে তাদের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন কোন উপদেষ্টার বক্তব্য, রাজনৈতিক ভূমিকা, অন্যকে আক্রমণ করে উস্কানিমূলক বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। উপদেষ্টাদের এসব ভূমিকা জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার উপাদান হিসেবে কাজ করবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের ব্যাপারে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতি আস্থা রেখে রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে মতভেদ থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সকলের তৎপরতা রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী নির্ধারণ করে মাঠ গোছানোর কাজ করছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিবেদনে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কেমন হতে পারে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেছেন। কোন কোন রাজনৈতিক দল ডিসেম্বর আবার কেউ রোযার পূর্বেই নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অবাধ সুযোগ লাভ করে। আক্রমণাত্মক, উস্কানিমূলক ও পরস্পরকে দোষারোপ করে প্রদত্ত বক্তব্য বিবৃতি ক্রমাগতভাবে রাজনীতিতে বিভেদ ও বিতর্ক সৃষ্টি করছে। সকলের প্রত্যাশা ছিলো ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ফ্যাসিবাদের করালগ্রাস থেকে উদ্ধার করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাওয়া। সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহ ভবিষ্যৎ রাজনীতি সম্পর্কে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করেছে। নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে তৎপরতা চালানোর কারণে জনগণও সন্দেহ সংশয়ের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। ছাত্রজনতার যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছিলো সেই ঐক্য যেন ক্রমেই অনৈক্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যা কোন অবস্থাতেই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সংস্কার, নির্বাচন ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা দিনদিন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এ সাপ্তাহিক পত্রিকার মতে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। ১৫ মে বৃহস্পতিবার “আফটার দ্য রিভোল্যুশন, বাংলাদেশ ইজ হোপিং টু রিফর্ম শীর্ষক প্রতিবেদনে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘একনায়কতান্ত্রিক’ শাসনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস ইকোনমিস্টকে বলেছেন, গত ১৬ বছর বাংলাদেশ টানা ভূমিকম্পের মধ্যে দিয়ে গেছে। ড. ইউনূসের ভাষায় যা কিছু ধ্বংস হয়েছে আমরা সবকিছু ঠিক করার চেষ্টা করছি। আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি; জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা আশাবাদী।”
ইকোনমিস্ট লিখেছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র সামনে আসছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতি বছর ১ হাজার ৬শ কোটি ডলার পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। অপহরণ, হত্যা ও গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি তুলেছে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ব্যবস্থা ফিরে না আসে। সেজন্য গণতান্ত্রিক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন, আইন ও বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনার লক্ষ্যে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কমিশন গঠন করে সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এসব কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনার জন্য গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশন সব সুপারিশ একত্রিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ তৈরী করবে। যা নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি নতুন বাংলাদেশের সূচনা ঘটাবে। কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছানোটা সহজ হবে না বলে মনে করছে দ্য ইকোনমিস্ট। কারণ হিসেবে পত্রিকাটি বলেছে, কোন কমিশনের থাকা উচিত, কোনটির থাকা উচিত নয় তা নিয়ে শুরু থেকেই রাজনীতি ও বিভিন্ন মহলের মতভেদ রয়েছে।
সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরী করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন নিয়ে। এই কমিশনের প্রতিবেদনে ইসলামের উত্তরাধিকারী আইনে পরিবর্তন এনে নারীদের আরও অধিকার দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যা নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলো তীব্র আন্দোলনে নেমেছে। দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে, সংস্কারপন্থীরা আশাবাদী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ইতোমধ্যে কিছু পরিবর্তন বাস্তবায়িত হওয়ার কথা বলেছেন, যেমন- হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগে একটি স্বাধীন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন জনাব আলী রীয়াজ।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে চলমান বিক্ষোভকারীদের সাধারণ দাবি হলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। ১২ মে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে, ফলে দলটির আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করলেও সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সফল হয়েছে। তবে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এখনো দুর্বল, বিনিয়োগের গতি মন্থর, কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কম এবং বৈদেশিক সহায়তার প্রবাহও তেমন দৃঢ় নয়। এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশ মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের পরেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতি ঘটেনি। গত মাসে বিনিয়োগ সম্মেলন করা হলেও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে বিনিয়োগ। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফেরা পর্যন্ত বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন করে বিনিয়োগ করতে হলে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হওয়া আবশ্যক। অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ আর্কষণের জন্য ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন, স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নেয়। একই সঙ্গে সব বিনিয়োগ প্রচারণা সংস্থাকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসার কার্যক্রমও হাতে নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের নীট প্রবাহ কমেছে। শিল্পের মূলধন যন্ত্র আমদানি নিম্নমুখী প্রবণতাতেই রয়েছে। সবমিলিয়ে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কোন চেষ্টারই বাস্তব প্রতিফলন এখনো দেখা যায়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হয়েছে। আর এখন রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল না হওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগ করার মত আস্থার জায়গা তৈরী হয়নি।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও হারানো অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য জনগণের নির্বাচিত সরকার অপরিহার্য। প্রায় সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে গেজেট নোটিফিকেশনের পর রাজনীতিতে ভিন্ন ইস্যুর অবতারণার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও দূরত্ব বৃদ্ধির প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের আন্দোলন পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন কোন উপদেষ্টা সরকারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পক্ষপাতমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করে নতুন বিতর্কের অবতারণা করেছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা, যানজট নিরসন, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরী, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা ইত্যাদি বিষয় সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। মানুষের নিত্যকার সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকার যেন ভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে সরকারের জনপ্রিয়তা দিনদিন কমে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও বিধানের বিরুদ্ধে কোন প্রস্তাব জনগণ কখনো মেনে নিবে না। বরং এ ধরনের উদ্যোগ অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করবে। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাতে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে দারুণভাবে আঘাত হেনেছে। আবহমান বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিধানকে অবজ্ঞা ও অস্বীকার করা হয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। কমিশন বাংলাদেশের প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় বিধান বিবাহের উচ্ছেদের মত ব্যক্ত করেছে। প্রস্তাবিত সুপারিশকে অনেকেই সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মনে করেন। এই বিতর্কিত প্রতিবেদন এখনো বাতিল না হওয়ায় জনগণের মধ্যে ক্রমাগতভাবে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের মনের ভাষা উপলব্ধি করে এ প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করার পর থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক ক্রমাগতভাবে শীতল হতে থাকে। ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অসত্য প্রচারণা চালানো হয়। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে ভারতের গণমাধ্যমে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতা দখল বলে প্রচারণা চালানো হতে থাকে। ভারতের সরকারী দল এবং কিছু কিছু পত্রিকায় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের অসত্য তথ্য তুলে ধরা হয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর ভারতের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভারতের তৎপরতা থেকে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের গণবিরোধী স্বৈরশাসকের পতনকে কোন রকমেই মেনে নিতে পারছে না ভারত। কারণ হাসিনা ছিলো দিল্লীর তাঁবেদার শাসক যিনি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের চেয়ে দিল্লীর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন। বাংলাদেশের মানুষ গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে এ দেশের মানুষের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করেছে। এখন সীমান্ত জুড়ে ভারত অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ৭-৮ মে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ২শ ২ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারত। ৯ মে ৭৮ জনকে একটি জাহাজে করে বাংলাদেশের সুন্দরবন সীমান্তের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফেলে যায় ভারত। ১৪ মে সিলেট সীমান্তে ৪০ জনকে পুশইন করেছে ভারত। ভারতের এই ভূমিকা বাংলাদেশকে চাপে রাখার একটি অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমাদের মনে রাখা দরকার আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলসমূহ অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। জেল-জুলুম-নির্যাতন-গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে বহু মানুষকে। অবশেষে ছাত্রজনতা, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলসমূহের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলে ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে দেশ ও জাতি মুক্তিলাভ করে। সেই ঐক্য যেন অটুট থাকে সেদিকেই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। অনৈক্যের কারণে এই বিজয় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে রাজনৈতিক দলসমূহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
লেখক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি।