সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচার কেয়ামত পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলমান রাখা অপরিহার্য; এসব অপরাধের বিচার বাদ দিলে জাতি তার মর্যাদা পুনরায় ফিরে পাবে না।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এক বক্তব্যে রনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসরা যে নির্মমতা চালিয়েছে—খুন, ধর্ষণ, নারীদের ওপর বর্বরতা—এসব অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মাধ্যমে কিছু বিচারের খণ্ডিত কাজ হয়েছে, কিন্তু যারা তখন দায়ী ছিল তাদের ওপর পূর্ণাঙ্গ বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি।’
রনি বলেন, কেউ যদি একাত্তরের বিচারে অসামঞ্জস্য থাকার অভিযোগ করে, তবুও সেই অভিযোগ কোনোভাবেই একাত্তরের অপরাধকে মুছে ফেলতে পারে না। তিনি মন্তব্য করেন, জামায়াত ও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক প্রতিফলন হিসেবে নিজেদের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে; তারা দাবি করে, পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক যুক্তি দিয়ে অসাম্য ও নির্যাতনের হিসাব মেটানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতের শুধু ক্ষমা চাওয়া কোনো সমাধান নয়। একাত্তরের অপরাধের পূর্ণাঙ্গ বিচার, প্রয়োজন হলে বহু বছর ধরে চলতেই হবে।’ রনি দাবি করেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ের অভিযোগগুলোও আইনিভাবে বিচার হওয়া উচিত।
রনি ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের ঘটনাকে নীতিগতভাবে সংযুক্ত করে বলেন, উভয়ের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে নতুন ধরনের রাজাকার বা দোসর বাহিনী গড়ে ওঠার পথ বন্ধ থাকে।
তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতার সময়ের অর্থনৈতিক ও আইনি বিষয়গুলোরও উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার সময় পাকিস্তান থেকে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ ফেরত নেওয়ার বিষয়টি এখনো অনিষ্পন্ন এবং মূল্যায়নযোগ্য। একই সঙ্গে তিনি ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে বিহারিদের সমস্যা সমাধানেরও দাবি জানান।
রনি শেষাংশে জোর দিয়ে বলেন, ‘জামায়াত রাজনীতি করতে পারে; নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করুক। তবে পূর্বে যারা অপরাধ করেছেন তাদের প্রতিটি ঘটনাকে বিচারহীন রাখা যাবে না। প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, সেই বিচার চলুক; কেয়ামত পর্যন্তও এই বিচার চালিয়ে যাওয়া উচিত।’







