আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সংস্কার কার্যক্রমসহ নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে অস্থিরতা ও টানাপোড়েন। তবুও সরকারের ঘোষিত ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সময়সূচি সামনে রেখে প্রস্তুতি জোরদার করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সব কর্মসূচিতেই এখন মূল গুরুত্ব পাচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন সমঝোতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। এবার প্রার্থিতায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে তরুণ, শিক্ষিত, সৎ ও যোগ্য নেতাদের। প্রচারে যুক্ত করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড, যা অতীতের তুলনায় এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।
তরুণ ও নারী ভোটারদের টার্গেট
রাজধানীসহ সারা দেশে তরুণ ও নারী ভোটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাড়া ফেলেছেন জামায়াত প্রার্থীরা। ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের প্রত্যাশা, অভিযোগ ও পরামর্শ শুনছেন প্রার্থীরা। একই সঙ্গে উপস্থাপন করছেন নিজেদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সামাজিক প্রতিশ্রুতি।
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়, অসহায়দের সহায়তা কার্যক্রম—এসব আয়োজনের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন।
নির্বাচনি প্রচারে সক্রিয় করা হয়েছে নারী নেত্রী ও কর্মীদেরও। একইসঙ্গে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতিও গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থা ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পরিচালনা করছে নিজস্ব প্রচার অভিযান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তালিকার কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন বা সমন্বয় আসতে পারে।
খুলনায় ব্যতিক্রমী প্রচার
খুলনা-৫ আসনের প্রার্থী ও দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাম্প্রতিক এক হিন্দু সমাবেশে যোগ দিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
৩১ অক্টোবর ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এই সমাবেশে ১৪টি ইউনিয়ন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে বর্ণিল মিছিল হয়।
গোলাম পরওয়ার বলেন,
“স্বাধীনতার পর যারা দেশ পরিচালনা করেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়কে শুধু ব্যবহার করেছে। এবার সময় এসেছে তাদের প্রকৃত উন্নয়নের। এজন্য ইসলামি সরকারের প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন,
“এবার হিন্দুদের স্লোগান—‘সব মার্কা দেখা শেষ, দাঁড়িপাল্লার বাংলাদেশ।’”
এর আগের দিন ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াতের মহিলা বিভাগ আয়োজিত ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা ক্যাম্প ব্যাপক সাড়া ফেলে। সেখানে গোলাম পরওয়ার জানান, ক্ষমতায় গেলে জামায়াত “শাসক নয়, সেবক” হিসেবে কাজ করতে চায়।
ঢাকায় প্রাণবন্ত প্রচারণা
রাজধানীর বিভিন্ন আসনে জামায়াত প্রার্থীরা রাত-দিন গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি, পেশাজীবী মতবিনিময়, এবং মোটর শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
গত শুক্রবারের বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করার দাবি, প্রীতি ম্যারাথন ও মোটর শোভাযাত্রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়।
ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী ও মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান বলেন,
“আমরা নারী ও পুরুষকে আলাদা গ্রুপে ভাগ করে ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। মসজিদে অনুমতি নিয়ে কথা বলছি, মার্কেটে উঠান বৈঠক করছি।”
তিনি জানান, প্রচারের পাশাপাশি চলছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও অনলাইন ক্যাম্পেইন।
“ভোটারদের কাছে আমরা সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরছি। আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি মানুষকে আশাবাদী করছে,” বলেন মান্নান।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েছে, তাই ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি তুলেছেন ভোটাররাও।
ডিজিটাল প্রচারে তরুণদের নজর
ঢাকা-১৬ আসনের প্রচার টিমের সদস্য হাসানুল বান্না চপল বলেন,
> “তরুণরা এখন মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। তরুণদের কাছে পৌঁছাতে যত উপায় আছে, সবই ব্যবহার করছি।”
একইভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল সম্প্রতি নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, “নতুন প্রজন্মই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবে। আমরা চাই, তারা দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে এগিয়ে আসুক।”







