সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়া নিয়ে চলমান জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। মন্দিরের জমি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পুর বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, আরিফুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে মন্দিরে তালা ঝুলিয়ে দিলে কয়েকদিন ধরে মন্দিরে পূজা-অর্চনা বন্ধ রয়েছে এবং ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
২৩ নভেম্বর সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পুর নেতৃত্বে একটি দল মন্দির দখলের উদ্দেশ্যে ভেতরে প্রবেশ করলে সেবায়েত জিতেন চন্দ্র নাথের স্ত্রী স্মৃতি রাণী নাথ ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা হয়। এতে আহত হন তাদের ছেলে রাহুল দেবনাথ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়, যা পরে আদালতের নির্দেশে দ্রুত বিচার আইনে রুজু হয়। ঘটনার পর আরিফুল হক চৌধুরী সামাজিকভাবে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে মন্দিরে তালা ঝুলিয়ে দেন, তবে এখনো তালা খোলা হয়নি।
পিবিআইয়ের তদন্তে মন্দিরের প্রায় ১২ কোটি টাকার ভূমি বিক্রি ও ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য উঠে এসেছে। তদন্তে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বিরাজ মাধব চক্রবর্তী, দিবাকর ধররাম, সুধাময় মজুমদার, শান্তনু দত্ত সন্তু, সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, নিতাই চন্দ্র পালসহ আরও অনেকে রয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৫৬ সালে তৎকালীন সম্পাদক বিরজা মোহন দাস পুরকায়স্থ দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় রেকর্ড করেন এবং ২০০৫ সালে অবৈধ কমিটি ১১.৪৪ শতাংশ জমি হস্তান্তর করে, যেখানে এখন বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতা নিতাই পাল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুনরায় মন্দিরের সম্পত্তিতে প্রভাব বিস্তার করছেন। মন্দিরের সেবায়েত পরিবারের অভিযোগ, বাপ্পু ও সহযোগীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ভয়ভীতি সৃষ্টি করছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা সেখানে সাধারণ সভা করতে গিয়েছিলেন এবং হামলার অভিযোগ মিথ্যা। নিতাই পালও নিজেকে শুধু ‘ভাড়াটিয়া’ দাবি করেন।
আইনজীবী ইরশাদুল হক বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ এবং উপাসনালয়ে তালা দেওয়া সাম্প্রদায়িক উসকানির শামিল। এসএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, দুই পক্ষের মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
মন্দিরের সাধারণ ভক্তরা দ্রুত তালা খুলে পূজা-অর্চনা চালুর দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।







