সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টা অবরোধ করে তারা সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অন্তত ২০ মিনিট অবরোধ করে রাষ্ট্রীয় অবিচারের প্রতিবাদ জানান।
গত বছরের ২ জুলাই বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করেন। নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও বাটা সিগন্যাল ঘুরে মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে থেমেছিল বিকাল পৌনে ৪টায়। ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক’Ñএসব স্লোগানে রাজপথ মুখর করে তুলেছিলেন তারা।
মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছানোর আগেই সেখানে অবস্থান নেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে গেলে তারা পুলিশকে উদ্দেশ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পুলিশ সরে যেতে বাধ্য হয়। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সেদিন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘এটা শুধু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন নয়, এটা রাষ্ট্রের আদর্শ রক্ষার আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বংশগত নয়, এটা নৈতিক মূল্যবোধ আর সে আদর্শে আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি।’
তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৩ জুলাই দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। একই সঙ্গে দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
শুধু রাজধানী নয়, সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও কঠোর কর্মসূচি পালন করেছিলেন। বিকাল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন তারা। এতে দুপাশে অন্তত দুই কিলোমিটারজুড়ে যানজট তৈরি হয়। তার আগে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, ৩ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করবেন তারা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে ২০১৮ সালে প্রথম বড় আন্দোলন হয়েছিল। তখন ৫৬ শতাংশ কোটাব্যবস্থা ছিল, যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০, অনগ্রসর জেলা ১০, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ৫ এবং প্রতিবন্ধী কোটা ছিল ১ শতাংশ। শিক্ষার্থীরা তা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানান।
ওই দাবি অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে করা রিটের রায়ে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ওই পরিপত্রের অংশবিশেষ অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরান তুন করে রাস্তায় নেমেছিলেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল ছাড়া আরো কিছু দাবি জানান। শেখ হাসিনার সরকার ন্যায্য দাবিগুলোর সুষ্ঠু সমাধান না দিয়ে বরং বারবার আন্দোলনকারীদের দমন করতে পুলিশের শক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সবার চোখে তুলে ধরেছিলেন—এ লড়াই কেবল চাকরির জন্য নয়, এটা একটি বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।