পারিবারিক বিরোধের জের ধরে বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক লিটন সিকদার লিটুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে লিটন সিকদারের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ছোট ভাই ও বোনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
এর পাশাপাশি বসতঘরে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নিহত লিটন সিকদার লিটু নজির সিকদারের ছেলে। গুরুতর আহত সুমন সিকদার (৩৫) ও মুন্নি বেগমকে (৩৮) বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুরের বিল্লবাড়ি এলাকার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার সূত্রপাত লিটুর বোন মুন্নি বেগম ও তার স্বামী জাকির গাজীর দাম্পত্য কলহ নিয়ে। জাকির গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করায় দাম্পত্য বিরোধ চরমে ওঠে এবং উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করে। বৃহস্পতিবার জামিনের পর পুলিশ জাকির বাড়িতে ফেরে। এ সময় আগে থেকে অবস্থান নেয়া একদল দুর্বৃত্ত পুলিশের সামনেই তাদের ওপর হামলা করে। পুলিশ তখন ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর নিহতের খবর পেয়ে পুলিশ ফিরে এসে লিটন সিকদারের লাশ উদ্ধার করেন। গুরুতর আহত সুমন (৩৫) ও বোন মুন্নি বেগমকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আহত মুন্নি বেগম জানান, তার স্বামী জাকির হোসেন গাজী গোপনে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ হয়। সম্প্রতি এ ঘটনা নিয়ে তিনি ও স্বামী পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। মামলার আসামি জাকির গাজী বৃহস্পতিবার জামিন পায়। পরে তারা পুলিশসহ জাকিরের বাড়িতে আসেন। তখন পুলিশের সামনেই একদল লোক তাদের ওপর হামলা করে ঘর ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লিটুর ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। স্থানীয়রা দাবি করেন, লিটু বিতর্কিত ব্যক্তি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এমনকি কিছু দিন আগে জাকিরকে গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করে বলে জানা গেছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানান, জাকির গাজীর চাচা ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম গাজী দীর্ঘদিন থেকে লিটুর পরিবারের ওপর প্রভাব বিস্তার করছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হামলাকারী পরিবারের সম্পৃক্ততা থাকায় রাজনৈতিক উত্তাপও দেখা দিয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেনি।
এ ঘটনায় মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি বলেন, তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলা হবে। পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, পুলিশ মামলা তদন্ত করতে ওই এলাকায় গিয়েছিল। তারা ফিরে আসার পর হামলার খবর পায়। পরে পুনরায় ওই এলাকায় গিয়ে লিটুকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। আহত দুইজনকে উদ্ধার করে শেবাচিমে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।