চাকরিবিধি অনুযায়ী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মন্ত্রণালয় অনেকের শিক্ষা ছুটির আবেদন নাকচ করায় তরুণ গবেষকরা চরম হতাশায় পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে—সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে এসব আবেদন অযৌক্তিভাবে বাতিল করা হচ্ছে। ফলে কেউ কেউ স্কলারশিপ ধরে রাখতে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, আবার অনেকে চাকরি বাঁচাতে স্কলারশিপ ত্যাগ করছেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানীয় অনুমোদন পাওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতায় এসব ছুটি বাতিল হচ্ছে। এমনকি অনুমোদিত শিক্ষা ছুটিও বাতিল করার নজির দেখা গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিনিয়র সচিব বলেন, শিক্ষা ছুটি নিয়ে নতুন কোনো নিয়ম করা হয়নি। ‘ফুল ফান্ডেড’ স্কলারশিপধারীদের ছুটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। বাতিল হয়েছে কেবল অ্যাসিস্ট্যানশিপ স্কলারশিপ বা যাদের কোয়ার্টারলি রিপোর্ট জমা দেওয়ায় জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের আবেদন।
কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাখ্যা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না বলে দাবি করছেন গবেষকরা। বিসিএসআইআরের এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, তার স্কলারশিপ সম্পূর্ণ অর্থায়িত হলেও তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, “ফুল ফান্ডেড” সংজ্ঞা নিয়ে মন্ত্রণালয় জটিলতা তৈরি করছে। এর আগে কখনো এমন সমস্যা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা ছুটি না পেয়ে বিসিএসআইআরের অন্তত দুই কর্মকর্তা সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। একইভাবে জুলাই মাসে আরও তিনজন কর্মকর্তা আবেদন করেও অনুমোদন পাননি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির একজন কর্মকর্তার আবেদনও নাকচ হয়েছে। পরমাণু শক্তি কমিশনেরও এক চিকিৎসক ও তিন বিজ্ঞানীর আবেদন সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে।
অনেক বিজ্ঞানীর অভিযোগ, একসঙ্গে কয়েকজন ছুটিতে গেলে দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হবে—এই অজুহাতে মন্ত্রণালয় আবেদন নামঞ্জুর করছে। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান অনুমোদন দেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
গবেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ গবেষণা ও উচ্চশিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করছে। এর ফলে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।