জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। পুরনো সংবিধানে এত সংশোধন এনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য শক্ত আইনি ভিত্তি প্রয়োজন; শুধু প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করলে তা বাস্তবায়ন হবে না।
সোমবার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কেমন সংবিধান চাই?’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন আরও বলেন, “আমরা এমন এক সংবিধান চাই, যা গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখবে এবং দেশের জনগণের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করবে।”
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সংবিধান সংস্কার করা না হলে আবারও গণঅভ্যুত্থান ঘটবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম সনদ বাস্তবায়নের সঠিক পথ নির্দেশ করছে, অথচ দেশের বিশেষজ্ঞরা সেই সত্য স্বীকার করতে চাইছেন না।”
বর্তমান সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান এখন কার্যত মৃত। এটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে শুধু দেখানোর জন্য। এই সংবিধান আর কার্যকর নয়।”
তিনি আরও দাবি করেন, বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে সংবিধানের ১০৬ ধারা ব্যবহার করে, যা তিনি “ধাপ্পাবাজি” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার বক্তব্যে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার নিয়োজিত রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির কাছে রেফারেন্স পাঠান, অথচ সে সময় প্রধান বিচারপতি ছিলেন পলাতক। সেই রেফারেন্সের ভিত্তিতেই সরকার গঠিত হয়েছে, যা তার মতে বড় ধরনের প্রতারণা।
সারোয়ার তুষার প্রশ্ন তোলেন, “১০৬ ধারার সার্টিফায়েড কপি কোথায়? কোনো শুনানি (হিয়ারিং) ছাড়াই এটা কার্যকর করা হয়েছে। অথচ শুনানি বাধ্যতামূলক।”
তিনি অভিযোগ করেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ এলেই আদালত ও ১০৬ ধারা দেখানো হচ্ছে। অথচ ১০৬ হলো সংবিধানের অধীনস্থ একটি ধারা। এর মাধ্যমে সাংবিধানিক সংকট বা জুলাই সনদের বৈধতা টেকানো সম্ভব নয়। একইভাবে পার্লামেন্টও টিকবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনি সব আইন ধারা-উপধারা মুখস্থ করে ফেলেছেন, কিন্তু আমরা পদ্ধতিগত সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করছি। অনেকে বলে এই কমিশন হয়ে গেছে ‘সালাহউদ্দিন কমিশন’। যেন সেটি না হয়।”
সারোয়ার তুষার জোর দিয়ে বলেন, “সংস্কার নির্বাচনের আগেই হতে হবে। নির্বাচন হবে ইউনূস সরকারের অধীনে এবং নতুন সংবিধানের ভিত্তিতে। তা না হলে আবারও গণঅভ্যুত্থান ঘটবে।”