বন্ড সুবিধা ছাড়াই কয়েকটি খাতের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এখন শুধু ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমেই কাঁচামাল আমদানি করার সুযোগ পেতে যাচ্ছে। এর আওতায় আসছে ফার্নিচার, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ইস্পাত, ইলেকট্রনিক্স ও হালকা প্রকৌশল খাত। পাশাপাশি তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, চামড়া ও শিল্প বিল্ডিং খাতের মতো বন্ড লাইসেন্স সুবিধাপ্রাপ্ত খাতগুলোকেও এ সুযোগ দেওয়া হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন শিগগির জারি করা হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ উদ্যোগ চালু হলে রপ্তানি পণ্যে বহুমুখীকরণে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস: এক্সপোর্ট, বন্ড ও আইটি) কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রস্তাবটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে রয়েছে। ভেটিং শেষ হলে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। তিনি জানান, অপ্রচলিত রপ্তানিমুখী খাতগুলোকে বিশেষভাবে এ সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। সোয়েটার খাতে বন্ড সুবিধা না থাকায় সেখানে ব্যাংক গ্যারান্টির সুযোগ দেওয়া হবে। এসএমই খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমানে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ড সুবিধার আওতায় বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। তবে খাতভেদে এ সুবিধা সীমিত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ উঠছে। এই সমস্যা নিরসন এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স নেই, তাদের ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করার সুযোগ রপ্তানিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। তবে তিনি বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ফার্নিচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম এইচ রহমান বলেন, ফার্নিচার খাতে কাঁচামালের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি সম্ভব হলে এ খাতের রপ্তানি কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকগুণ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূত্র জানিয়েছে, উদ্যোক্তারা রপ্তানিযোগ্য পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্কের বিপরীতে এনবিআরকে ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেবেন। রপ্তানি সম্পন্ন হলে কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর গ্যারান্টি ফেরত দেওয়া হবে। তবে নির্ধারিত রপ্তানি সম্পন্ন না হলে আমদানি করা কাঁচামালের শুল্ক সরকারী কোষাগারে জমা পড়বে, ফলে রাজস্ব ফাঁকি রোধ হবে।
বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করেছে, যার প্রায় ৮৫ শতাংশ এসেছে পোশাক খাত থেকে। নতুন এ উদ্যোগ রপ্তানির একক নির্ভরতা কমাতে এবং পণ্য বৈচিত্র্য আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।