৪ আগস্টের ছাত্র-জনতা আন্দোলনের চাপের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতে অবস্থানকালে তিনি নিয়মিত উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং নেতাকর্মীদের আশ্বাস দিচ্ছেন যে, বাংলাদেশে ফেরার জন্য তিনি সক্রিয় পদক্ষেপ নেবেন। তবে এই তর্জন-গর্জন সচেতন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নেতাকর্মীদের কাছে এখনও ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এর মধ্যে আবারও রাজনৈতিক মহলে চাউর হচ্ছে ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’। দুর্গাপূজার পর কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নিউটাউন শাখা ফের দেশে ফিরে কর্মসূচি শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের অব্যাহত সময়ে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনকে অগ্রাহ্য করে ভারত ও তার প্রক্সিরা তাকে পুনরায় প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে সচল করা হচ্ছে বিভিন্ন আওয়ামীপন্থি এজেন্সি। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন তুলেছে—ফ্যাসিবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি সত্যিই দেশে ফিরবেন? ভারতীয় মিডিয়ার একাংশ এবং কিছু বুদ্ধিজীবীর তৎপরতা এই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (R&AW) হাসিনার পক্ষে জনমত তৈরিতে সরাসরি যুক্ত। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এক সম্মেলনের পেছনে এ সংস্থার সমর্থন থাকার কথাও বলা হচ্ছে। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সারির কমিউনিস্ট নেতা গৌতম রায়, যিনি হাসিনার প্রশংসা করে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টা করছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, তার একটি বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন শেখ হাসিনা।
সম্মেলনে গৌতম রায় দাবি করেন, ৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে হাসিনা নিয়মিত পূর্ণভোজনের সুযোগ পাননি; অধিকাংশ সময় তিনি চা ও বিস্কুট খেয়ে কাজ সামলেছেন। তিনি শেখ হাসিনাকে সুফিয়া কামাল, সুচিত্রা মিত্র ও গৌরী আইয়ুবের মতো নারী নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
শুধু সম্মেলন নয়, ডিজিটাল মাধ্যমে ও হাসিনার পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের একটি ওয়েব পোর্টাল নিয়মিতভাবে আওয়ামীপন্থিদের অনুষ্ঠান প্রচার করছে। পরিচালকের দাবি, তিনি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে প্রচারমূল্যে কোটি টাকারও বেশি অর্থ পেয়েছেন। পাশাপাশি, অসংখ্য ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সারকেও অর্থ প্রদান করে পোস্ট করানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই তৎপরতা নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকেই মনে করছেন, ভারত ও বাংলাদেশের একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও শেখ হাসিনার ‘বাগাড়ম্বর’ চোখে পড়ে, বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কজনিত চাপের মধ্যে থাকায় ভারতের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা প্রশ্নের মুখে।
এর মধ্যেও দিল্লিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং হাসিনার ঘনিষ্ঠ কলকাতার কিছু বুদ্ধিজীবীকে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, পূজার পর তারা দেশে ফিরিয়ে শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য বড় পদক্ষেপ নিতে পারেন। এই প্রচারে পিডিএফ, বই ও বিভিন্ন ধরনের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রচারে ব্যবহৃত ভুয়া তথ্য ও উপাত্ত কলকাতা, দিল্লি ও ঢাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। পাশাপাশি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও ব্যক্তিগতভাবে ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, সব নীলনকশা চলছে দিল্লিতে হাসিনার আশ্রয়স্থলে বসেই।
সব মিলিয়ে, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের তৎপরতা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেছেন।