জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দক্ষিণ সুদানে কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত কর্নেল জিএম রাজীব আহমেদকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকারের এ নিয়োগ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিসরে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্নেল রাজীব ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী সামরিক সচিব। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বে থাকার সময় তিনি চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান দমনে অবৈধ নির্দেশ পালন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়ান। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলন দমনে বিভিন্ন বাহিনীকে সমন্বয়ের ভূমিকায়ও ছিলেন। এ সংক্রান্ত কিছু নথি ‘আমার দেশ’-এর কাছেও পৌঁছেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শান্তিরক্ষী মিশনে কারা যাবেন তা নির্ধারণ করে সশস্ত্র বাহিনীর আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন; মন্ত্রণালয় কেবল প্রসেসিংয়ের কাজ করে। কোনো কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী এ ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর আখ্যায়িত করে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা একজন কর্মকর্তাকে জাতিসংঘ মিশনে পাঠানো চুক্তি ও প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। এতে জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে এবং শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তার মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) উচিত এ বিষয়ে জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো।
কর্নেল রাজীব ২০২০ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সহকারী সামরিক সচিব পদে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে উপসামরিক সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শেখ রেহানা ও মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার দিল্লি পালানোর সময় তার সঙ্গেও ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি সেনাবাহিনীর ৪১তম লং কোর্সের অফিসার (বিএ-৫৯২৯)।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত হলেও সম্প্রতি তাকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি BANBAT-8 (66 EB), UNMISS-এর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এদিকে, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার একটি ফেসবুক পোস্টে উঠে এসেছে, সেনাপ্রধান থাকাকালে তিনি মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উপসামরিক সচিব কর্নেল রাজীবসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামরিক কর্মকর্তাদের কারণে তা সম্ভব হয়নি।