পাকিস্তান ও সৌদি আরব গত সপ্তাহে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নতুন ধরনের কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
সামরিক ক্ষমতায় এগিয়ে থাকা পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, আর অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী সৌদি আরব সামরিকভাবে তুলনামূলকভাবে দুর্বল। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক এবং উভয়েরই সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়া, এই চুক্তিকে রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
চুক্তির মূল শর্ত হলো—যদি কোনো এক দেশকে আক্রমণ করা হয়, অন্য দেশ তা নিজের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করবে। ফলে পাকিস্তান বা সৌদি আরবের ওপর হামলা হলে উভয় দেশের মিলিত প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত। এছাড়া স্থল, বিমান ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ও বৃদ্ধি পাবে।
পাকিস্তান পারমাণবিক ক্ষমতায় সমৃদ্ধ হওয়ায় এই চুক্তি সৌদি আরবের জন্য একটি নিরাপত্তা গ্যারান্টি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের জন্য পাকিস্তানের এই সমর্থন কৌশলগত গুরুত্ব বহন করছে।
চুক্তি প্রকাশের পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, “আমাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিক মোড় নিচ্ছে, আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।” সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেন, “সৌদি আরবের অর্থ ব্যবহার করে পাকিস্তান আমেরিকান অস্ত্র কিনতে পারবে।” অন্যদিকে পাকিস্তানি কূটনীতিক মালিহা লোধি মন্তব্য করেছেন, “এটি অন্যান্য আরব দেশগুলোর জন্যও দরজা খুলেছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, চুক্তির ফলে পাকিস্তান আর্থিক, সামরিক ও কৌশলগত সুবিধা পাবে। সৌদি আরব থেকে আর্থিক সহায়তা, তেল ক্রয় ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাকিস্তান এবার সৌদি আরবের আর্থিক সাহায্যে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে পারবে।
ভারতের জন্য এই চুক্তি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় কূটনৈতিক প্রভাবের প্রেক্ষিতে, ভারতকে ভাবতে হবে—যদি পাকিস্তানের ওপর সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হয়, সৌদি আরব তা কি সরাসরি সমর্থন করবে এবং এ ক্ষেত্রে দেশীয় ও সৌদি আরবে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কি না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই চুক্তি পাকিস্তানকে আঞ্চলিকভাবে আরও প্রাসঙ্গিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরবে। পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতা, যুদ্ধ-অভিজ্ঞতা এবং সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তা মিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তানের অবস্থান এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে।
চুক্তি ঘোষণার পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, অন্যান্য আরব দেশও অনুরূপ চুক্তিতে যোগ দিতে পারে, যা পাকিস্তানের কৌশলগত গুরুত্ব আরও বাড়াবে।
সংক্ষেপে, পাকিস্তান-সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়নি, বরং ভারতের কৌশলগত বিবেচনা ও আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যের ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।