কুয়েটে সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতদের ঘটনায় দোষীদের বিচারিক কার্যক্রম সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শেষ না হলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সোমবার থেকে সকল প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
রবিবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন তারা। এর আগে শিক্ষকরা তাদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে বৈঠক করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দোষীদের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে।
কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. এম এম এ হাশেমের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। এদিকে সকল অপরাধের দ্রুত বিচার শেষ করে দ্রুত কুয়েটের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার লিখিত আবেদন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
যে কারণে কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়েছে। মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্বার্থ রক্ষায় ও উপর মহল নামক অদৃশ্য শক্তিকে তুষ্ট করছে বর্তমান প্রশাসন। আগামীকাল দুপুর বারোটার মধ্যে প্রশাসন কোন সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না নিলে উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে
শিক্ষক সমিতি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. এম এম এ হাশেমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও অনলাইন বুলিংয়ের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সিএসই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, কুয়েটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তৈয়েবুর রহমান, প্রিন্সিপাল টেকনিক্যাল অফিসার বাদশা মোহাম্মদ হারুন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি রোকনুদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব, সিএসই বিভাগের টু কে ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কুয়েট কর্মকর্তা ড. হানিফ, টু কে টু ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার নাজিম, কুয়েটের সিস্টেম অ্যানালিস্ট ইঞ্জিনিয়ার সাইফুর রহমান, টু কে ১৩ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার মেহেদি হাসান, টু কে ১০ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার কাশেম, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাবেক সভাপতি ইমদাদ মোড়ল প্রমুখ।
এদিকে সকল অপরাধের বিচার অতিদ্রুত সম্পন্ন করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু করার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা।
রোববার বেলা ১২টার দিকে পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভিসির কাছে এ দাবি জানান। লিখিত আবেদনে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতি গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছি। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সকল অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি। চলমান আন্দোলনের সময় কিছু অতিউৎসাহী শিক্ষার্থীর দ্বারা আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকদের প্রতি লাঞ্ছনা ও অসম্মানের যে ঘটনা ঘটেছে, তার ফলে শিক্ষকদের সাথে আমাদের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। আমরা সকল শিক্ষকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এবং তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারাই হোক।
আমরা শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফার যৌক্তিক দাবির প্রতিও সমর্থন জানাচ্ছি। তবে কতিপয় শিক্ষার্থী দ্বারা বহিরাগত ও বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার যে দাবি করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান জানাচ্ছি। প্রস্তাবিত বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি দ্বারা তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘায়িত হবে যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়াবে ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে।
আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখি এবং আমরা বিশ্বাস করি তাদের মাধ্যমেই ন্যায়বিচার কার্যকর হবে এবং কোনো নির্দোষের শাস্তি হবে না এই ভরসা রাখি। গত তিন মাস যাবত কুয়েটে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উদ্ধৃত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আমরা যেন অতিদ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ফিরতে পারি এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।