জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবে।
বৃহস্পতিবার শেষ দিনের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মামলার রাজসাক্ষী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান খান যুক্তিতর্কে বলেন, শেখ হাসিনার পলায়নের ঘটনাই তার অপরাধ প্রমাণ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, পতিত সরকারের কিছু ব্যক্তি চলমান বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিচার না হলে জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের প্রতি অবিচার হবে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, অপরাধ প্রমাণে প্রসিকিউশন “ক্রিস্টাল ক্লিয়ার” প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। ফোনকল রেকর্ড বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। এসব প্রমাণ দিয়ে বিশ্বের যেকোনো আদালতে অপরাধ প্রমাণ সম্ভব, বলেন তিনি। প্রসিকিউশন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তিতর্কে বলেন, শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় পালাননি, বরং তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।
বুধবার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশন যুক্তিখণ্ডন উপস্থাপন করে, যা দিয়েই বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে মামলার সত্য উদঘাটনে রাজসাক্ষী হন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার, আহত ব্যক্তি, চিকিৎসকসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে জুলাই গণহত্যা, নির্যাতন, গুম-খুনসহ নানা মানবতাবিরোধী ঘটনার বিবরণ।
এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা চলছে—একটি আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের অভিযোগে, আরেকটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
