অধ্যাপক গোলাম আযম ও মওলানা আবুল আ’লা মওদূদীর পারস্পরিক আদর্শিক সম্পর্ক নিয়ে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, অধ্যাপক গোলাম আযম কেবল মওদূদীর অনুসারীই ছিলেন না—তিনি তাঁর চিন্তা, দর্শন ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার একজন আন্তরিক অনুরাগী ছিলেন।
একসময় অধ্যাপক আযম কোরআনের একটি বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এটা কোরআনের অনুবাদ নয়, বরং মওলানা মওদূদীর উর্দু অনুবাদের অনুবাদ।” তিনি প্রথমে মওদূদীর উর্দু অনুবাদ বাংলায় রূপান্তর করেন, তারপর সেটিকে মূল আরবি কোরআনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বন্দিত্বের সময় জামায়াতে ইসলামী নেতারা শায়খুল হাদীস আল্লামা আযিযুল হকের সঙ্গে একই কারাগারে ছিলেন। তারা একপর্যায়ে জানতে চান, “আমাদের সঙ্গে মৌলিক মতপার্থক্য কোথায়?” জবাবে শায়খুল হাদীস বলেন, “একটি বিষয়েই মৌলিক পার্থক্য—সাহাবাদের মর্যাদা।” তখন জামায়াত নেতারা অনুরোধ করেন, তিনি যেন এ বিষয়ে একটি বই লেখেন, যা তারা সংগঠনের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
মুক্তির পর জামায়াত নেতারা অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিষয়টি জানান। অধ্যাপক আযম তখন বলেন, “মওলানার লেখা ‘সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা’ বইটি পড়ে দেখুন। যদি কোনো আপত্তি থাকে, সেটি উল্লেখ করুন।”
শায়খুল হাদীস বইটি পড়ে বলেন, “এ বইটিতে কোনো ভুল নেই, আর এর বাইরে কিছু বলারও নেই।” ফলে তিনি আর নতুন কোনো বই লেখেননি, এবং পরিকল্পিত উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত থেমে যায়।
ধর্মীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখানে অধ্যাপক গোলাম আযম রাজনৈতিকভাবে মওদূদীর অবস্থানকে শক্ত করেছেন, তবে একই সঙ্গে জামায়াতের একটি বিতর্ক মীমাংসার সুযোগও হারিয়েছেন। অনেকের মতে, যদি তিনি শায়খুল হাদীসকে স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ দিতেন, তবে সাহাবাদের মর্যাদা সংক্রান্ত মতপার্থক্যটি ঐক্যমতের মাধ্যমে নিরসন হতে পারত।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অধ্যাপক গোলাম আযমের মওদূদীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মানসিক অনুগত্যই হয়তো তাঁকে অবচেতনে এ সুযোগটি হারাতে বাধ্য করে।
ধর্মীয় মহল ও গবেষকরা বলেন, “অধ্যাপক গোলাম আযম ও মওলানা মওদূদী উভয়েই ছিলেন ইসলামী চিন্তার ইতিহাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও আদর্শিক সংহতির প্রতীক।”







