আজকের বিশ্ব যেন আঙুলের ছোঁয়াতেই হাতের মুঠোয়। তথ্য, বিনোদন ও সংবাদ—সবই মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছে আমাদের স্মার্টফোনের পর্দায়। কিন্তু এই প্রযুক্তির আশীর্বাদই অনেক সময় ঈমানের জন্য কঠিন পরীক্ষায় পরিণত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার রঙিন দুনিয়ায় মানুষ হারাচ্ছে লজ্জাশীলতা, মূল্যবোধ ও আল্লাহভীতির অনুভূতি। তাই এই যুগে একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঈমান অটুট রাখা।
ইসলাম মানুষকে সংযম, সততা ও পবিত্রতার শিক্ষা দেয়। অথচ আজকের সোশ্যাল মিডিয়ায় অশালীনতা, গীবত, অপপ্রচার, রিয়া (দেখানোর মানসিকতা) ও সময়ের অপচয় যেন সাধারণ ব্যাপার। আল্লাহ তায়ালা সফল মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
“যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।”
— (সুরা আল-মুমিনূন : ৩)
অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের সুখ-দুঃখ, নামাজ বা দান প্রদর্শন করেন অন্যের প্রশংসা পাওয়ার আশায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে বলেছেন,
“যে ব্যক্তি রিয়া করে, আল্লাহ তাকে রিয়ার কারণে শাস্তি দেবেন।”
— (সহিহ মুসলিম)
ঈমান রক্ষার প্রথম শর্ত হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ—চোখ, কান ও সময়কে হালাল কাজে ব্যয় করা। অশালীন কনটেন্ট, বিতর্কিত আলোচনা বা অন্যের চরিত্রহননমূলক পোস্ট থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।”
— (সুরা আন-নূর : ৩০)
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সচেতনতা ও সৎসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পেজ, চ্যানেল বা গ্রুপ অনুসরণ করা উচিত, যা ঈমান, জ্ঞান ও ইতিবাচক চিন্তাকে শক্তিশালী করে। ইসলামি আলেম, দাঈ ও দাওয়াতি কনটেন্টে যুক্ত থাকা ঈমান দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মসমালোচনা ঈমানের রক্ষাকবচ। প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে—সোশ্যাল মিডিয়ায় কত সময় ব্যয় করছি? আল্লাহ বলেন,
“সফল সে-ই, যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে।”
— (সুরা আশ-শামস : ৯)
যদি নামাজ, কোরআন পাঠ বা পরিবারের সঙ্গে মানসম্মত সময়ের জায়গা দখল করে নেয় ফোন, তবে তা ক্ষতির কারণ। মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি নিজে পাপের উৎস নয়—ব্যবহারের ধরনই একে হালাল বা হারাম করে।
একজন প্রকৃত মুমিন সেই, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়েও নিজের চোখ, জিহ্বা ও হৃদয়কে সংযত রাখতে পারেন। তাঁরাই সত্যিকারের বিজয়ী, যারা প্রযুক্তিকে ঈমানের সেবায় কাজে লাগাতে সক্ষম হন।
