যুদ্ধবিরতি ও পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের বিষয়ে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসেছে পাকিস্তান ও ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান। শনিবার (২৫ অক্টোবর) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এই বৈঠক শুরু হয়, যা চলমান দোহা আলোচনার ধারাবাহিক অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকের মূল লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি জোরদার করা, আকাশ ও স্থলপথের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রতিষ্ঠা করা।
আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী রহমতুল্লাহ নাজিব। তার সঙ্গে আছেন কাতারে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুহাইল শাহীন, জ্যেষ্ঠ নেতা আনাস হক্কানি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক মহাপরিচালক নূর আহমেদ নূর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি নূরুর রহমান নুসরাত এবং পররাষ্ট্র মুখপাত্র আব্দুল কাহহার বালখি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার সাতজন কর্মকর্তা। তারা আলোচনায় নিরাপত্তা, সীমান্ত পরিস্থিতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন।
বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো দুই দেশের মধ্যে শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে একটি যৌথ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এছাড়া উভয় দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, সীমান্ত বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং আফগান শরণার্থীদের জোরপূর্বক বহিষ্কার বন্ধের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফজল মানান মুনতাজ বলেন, “দোহা ও ইস্তাম্বুল বৈঠকে আফগানিস্তানের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইঙ্গিত দেয় যে, ইমারাতে ইসলামিয়া সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান চায়। তাদের অবস্থান এখন অনেক বেশি পরিণত ও বাস্তববাদী।”
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে বলেছেন, “যদি আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি না হয়, তবে পাকিস্তান আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে খোলামেলা সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।” তিনি আরও জানান, “আলোচনা আজ থেকে শুরু হয়েছে। আজ রাত বা আগামীকাল সকালেই এর ফলাফল পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
তবে সাবেক পাক কূটনীতিক আমির মোহাম্মদ গুরান বলেন, “আমরা চাই সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হোক, তবে পাকিস্তানের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। দোহা বৈঠকে তারা অস্পষ্ট ও অবিশ্বস্ত আচরণ করেছিল।”
এর আগে আফগান ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী (অর্থনৈতিক) মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারও জোর দিয়ে বলেছিলেন, “আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আন্তরিক সংলাপ ও সহযোগিতা অপরিহার্য।”
আঞ্চলিক কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ইস্তাম্বুল বৈঠকের ফলাফল দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।







