ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখন শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করাই হতে পারে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কৌশলগত উপায়।
আজ বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সাথে পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফ অফ আর্মি স্টাফস কমিটির চেয়ারম্যান সাহির শামশাদ মির্জার সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় তাদের মাঝে দ্বিপাক্ষিক নানান বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশ যতোদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে বাস্তবতার দৃষ্টিতে দেখতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে নিশানা বানানোর সাহস কেউ দেখাবে না। তাদের মতে, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হলে বাংলাদেশ নিজের প্রতিরক্ষা কাঠামো আরও মজবুত করতে পারবে।

তারা মনে করিয়ে দেন, বিশ্ব রাজনীতিতে ‘অতীতের শত্রু বর্তমানের বন্ধু’—এই নীতিতেই দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলার পরও আজ জাপান আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র। ব্রিটেন দুই শতাব্দী ভারতবর্ষ শাসন করলেও আজ ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। এমনকি সীমান্ত সংঘাত থাকা সত্ত্বেও ভারত ও চীন এখন নিয়মিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষা করছে।
একইভাবে, বাংলাদেশকেও ঐতিহাসিক আবেগের বদলে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে—বিশেষত চীন ও পাকিস্তানের মতো সামরিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে হলে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।

তারা আরও বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যেমন নিজেদের সুরক্ষার জন্য ন্যাটোর ছাতার নিচে পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশকেও আঞ্চলিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর (বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক) ভূখণ্ডে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে, তেমনই বাংলাদেশও কৌশলগত প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় টিকে থাকার লড়াই এখন শক্তির রাজনীতিতে নির্ভরশীল। তাই চেতনার রাজনীতি নয়, বাস্তববাদী কূটনীতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মাধ্যমেই বাংলাদেশকে শক্তিশালী ও নিরাপদ রাখতে হবে। তারা বলেন, “এই ব-দ্বীপে টিকে থাকতে হলে আমাদের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে। শক্তিশালী হওয়া ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই।”







