দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
নবগঠিত কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা হাসান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন—আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা কাকলী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জুলফিকার মাহমুদ, এবং ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুর রহমান ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদসমূহের গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা ২০২৫’-এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে কমিশন গঠন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শিগগিরই বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সময়মতো ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে প্রশাসন সব প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২৭ নভেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও ৮ অক্টোবর কমিশন গঠনের কথা ছিল, কিন্তু বিধি অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৭ অক্টোবর অধ্যাপক মোস্তফা হাসানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের জকসু নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে সোমবার জকসুর সংবিধি চূড়ান্ত হয়। এর আগে ২৬ আগস্ট বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় খসড়া সংবিধি গৃহীত হয়েছিল। সংবিধি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে প্রফেশনাল কোর্স, বিশেষ ডিগ্রি বা অন্য প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের আওতায় থাকবেন না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বলেন,
আমরা চাই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আনন্দঘন নির্বাচন আয়োজন করতে। এটি নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ, তবে সবার সহযোগিতা থাকলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব।”
কমিশন ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়াও এসেছে—
ছাত্রদল শাখা সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা চাই না ‘নীলক্ষেত মার্কা নির্বাচন’ হোক। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।”
ছাত্রশিবির সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আমরা আস্থা রাখি। তিনি যেন কোনো প্রভাবের কাছে নত না হন।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, “কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
জাতীয় ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, “আমরা চাই শুধু বর্তমান শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্বে আসুক।”
প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচনের এই আয়োজনকে ঘিরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন উৎসবের উচ্ছ্বাস ও নতুন প্রত্যাশার বাতাস বইছে।







