পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, চীনের সহায়তায় ইরান আবারও তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুনর্গঠন শুরু করেছে, যদিও জাতিসংঘের আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে। এই ঘটনাকে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে চীনের তৈরি সোডিয়াম পারক্লোরেট—যা কঠিন জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য অপরিহার্য রাসায়নিক উপাদান—এর প্রায় ২,০০০ টন চালান ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের কৌশলগত বন্দর আব্বাস বন্দরে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের “স্ন্যাপব্যাক নিষেধাজ্ঞা” পুনরায় কার্যকর হওয়ার পরপরই এসব চালান ইরানে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোডিয়াম পারক্লোরেট ছাড়াও ইরান সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণ, যেমন কম্পোজিট প্রোপেলান্ট, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গাইডেন্স চিপ ও পরীক্ষামূলক ইঞ্জিন অংশ আমদানি করছে। এসব উপকরণ মূলত চীনের বিভিন্ন ক্ষুদ্র কোম্পানির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে, যারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘তৃতীয় পক্ষের ট্রেডিং রুট’ ব্যবহার করছে।
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এমন সময়ে এই উদ্যোগ নিচ্ছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে এবং চীন অঞ্চলটিতে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আশঙ্কা করছে, ইরানের এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কেবল প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নয়, বরং পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম দূরপাল্লার মিসাইল উন্নয়নের দিকেও এগোতে পারে।
এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক সদস্য রাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইরানের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় এই ধরনের রাসায়নিক ও উপকরণের আমদানি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান যদি তাদের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে পূর্ণমাত্রায় চালু করতে পারে, তাহলে তা শুধু ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও নতুন হুমকি তৈরি করবে। এই প্রেক্ষাপটে চীনের সক্রিয় ভূমিকা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও নতুন উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে।







