ভারতে ধর্মীয়–রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য ও ইতিহাস বিকৃতির নতুন ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। দক্ষিণপন্থি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর বয়ানে মুসলমানদের ‘আক্রমণকারী’ ও ‘দখলদার’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হিন্দি চলচ্চিত্র দ্য তাজ স্টোরি, যেখানে দাবি করা হয়েছে তাজমহলের স্থানে একসময় ‘তেজো মহালয়া’ নামে একটি হিন্দু মন্দির ছিল। এ দাবি কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি ছাড়াই সিনেমা, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচারিত হচ্ছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লেখক সাইদ উনস এসব মন্তব্য তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি অভিনেতা পরেশ রাওয়াল অভিনীত দ্য তাজ স্টোরি ছবিতে বলা হয়েছে, মুঘল সম্রাট শাহজাহান নাকি একটি শিব মন্দির দখল করে তাজমহল নির্মাণ করেন। যদিও স্বীকৃত ইতিহাস অনুযায়ী ১৭ শতকে নির্মিত এই স্থাপনা প্রেমের প্রতীক হিসেবে বিশ্বখ্যাত।
এ ধরনের দাবি নতুন নয়। প্রতি কয়েক বছর পরপর আবারও এ বিষয়টি উত্তোলন করা হয় এবং নতুন দেশপ্রেমিক বয়ানের সঙ্গে প্রচারিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলে এসব ‘ছদ্ম–ইতিহাস’ আরও মূলধারায় প্রবেশ করেছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ দেওয়া, শহরের নাম পরিবর্তনসহ মুসলিম অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করা—এসবের ধারাবাহিকতায় সিনেমা ও সোশ্যাল মিডিয়া এখন প্রভাবশালী প্রচারণার মাধ্যম হয়েছে।
তেজো মহালয়া তত্ত্বের শুরু পুরুষোত্তম নাগেশ ওকের লেখায়। ১৯৮০–এর দশকে তিনি কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন শাহজাহান নাকি মন্দিরকে রূপান্তর করেছিলেন। ফার্সি, সংস্কৃত কিংবা উপনিবেশিক কোনো উৎসেই এ ধরনের উল্লেখ নেই। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক কর্তৃপক্ষও এ দাবিকে ‘ভিত্তিহীন কল্পনা’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে। তবু রাজনৈতিক সমর্থন ও সামাজিক প্রচারণায় এই দাবি টিকে আছে।
এই বয়ানের মাধ্যমে মুসলিম শাসকদের ‘হিন্দু ঐতিহ্যের দখলদার’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। ‘আমরা বনাম তারা’ মানসিকতা তৈরি করে মুসলিমদের সমাজে বহিরাগত হিসেবে দেখানোর প্রবণতা বাড়ছে।
ভারতের আদালতে এসব দাবিতে বহু পিটিশন করা হলেও সবই খারিজ হয়েছে। তবুও বারবার প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে।
তাজমহল বিতর্ক কেবল একটি স্মৃতিস্তম্ভকে ঘিরে নয়; এটি বৃহত্তর ইতিহাস পুনর্লিখনের অংশ। যেখানে প্রমাণের জায়গায় মিথকে স্থান দেওয়া হচ্ছে, যা দৈনন্দিন জীবনে বৈষম্য ও বিভেদকে আরও গভীর করে। সত্যের ভিত্তি দুর্বল হলে সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতার চেয়ে প্রচার ও আবেগ প্রাধান্য পায়—নিবন্ধে এমন সতর্কতা তুলে ধরা হয়েছে।







