বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে কখনো ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’, কখনো ‘বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী’, আবার কখনো ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে এই বর্ণনা কতটা যুক্তিসঙ্গত— সেই প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশান্স বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. মো. খাদিমুল ইসলাম।
২ নভেম্বর প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় তিনি বলেন, “হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলা মানে হলো তার আমলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও সংবিধান লঙ্ঘনের দায়কে আড়াল করা।”
ড. খাদিমুল ইসলামের মতে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাসিনার শাসন ছিল একাধিক বিতর্কিত ও সাজানো নির্বাচনের ফসল। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভ দমনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়, যা জাতিসংঘ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেছে। এছাড়া শত শত মানুষ নিখোঁজ, অঙ্গহানি বা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছেন। এসব ঘটনার পর হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং বর্তমানে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে বিচার চলছে।
তিনি বলেন, “যখন কোনো নেতা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, তখন তাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলা তার অপরাধকে স্বাভাবিকীকরণ করা হয়। এটি শিকারদের প্রতি অন্যায় এবং সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতার পরিপন্থী।”

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধের উল্লেখ করে ড. খাদিমুল বলেন, সংবাদকক্ষের নৈতিক দায়িত্ব হলো অপরাধী বা একনায়ক নেতাদের ভদ্রতাসূচক উপাধি না দেওয়া। যেমন, হিটলারকে কেউ ‘সাবেক চ্যান্সেলর’ বলেন না, বরং ‘নাৎসি একনায়ক’ বলা হয়— কারণ তা নৈতিক স্পষ্টতা বজায় রাখে।
তিনি আরও বলেন, “হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বললে পাঠকের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়— যেন তিনি স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। অথচ বাস্তবে তা ঘটেনি। সেই সময়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছিল।”
ড. খাদিমুল ইসলামের মতে, সাংবাদিকদের কাজ হলো তথ্য ও প্রেক্ষাপটসহ সত্য তুলে ধরা, মর্যাদাসূচক উপাধি দেওয়া নয়। “যখন কোনো নেতার শাসন শেষ হয় সহিংসতা, দমনপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে, তখন তাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলা তথ্য বিকৃতি ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখে,” তিনি লেখায় উল্লেখ করেন।
শেষে তিনি বলেন, “সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরা। তাই শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বললে সেই সত্য আড়াল হয়। বরং তার কর্মকাণ্ডের পূর্ণ প্রেক্ষাপট তুলে ধরা উচিত— সেটিই সাংবাদিকতার সততা ও নৈতিক দায়িত্ব।”







