অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে মসজিদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক-দু’টি পরিবার থেকে শুরু হওয়া মুসলিম বসতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে সম্প্রসারিত হয়—এ অভিজ্ঞতা বিশ্বের প্রায় সব বহুজাতিক সমাজেই দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়।
বহু দেশ থেকে আগত অভিবাসীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম বসবাস করেন। ২০২১ সালের শুমারি অনুযায়ী দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩.২ শতাংশ—প্রায় ৮ লাখ ১৩ হাজার—মুসলিম পরিচয় দিয়েছেন। এর বড় অংশই সাম্প্রতিক অভিবাসী, যাদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকও উল্লেখযোগ্য। তখনকার হিসাব অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫১ হাজার ৫০০, যা বর্তমানে এক লাখের কাছাকাছি বলে ধারণা করা হয়। এদের বেশিরভাগই নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশে, যার রাজধানী সিডনি।
সিডনির লাকেম্বা এলাকা বহু বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম জনজীবনের অন্যতম কেন্দ্র। নব্বইয়ের দশকে এখানে মুসলিম সংস্কৃতির শক্ত উপস্থিতি সবচেয়ে স্পষ্ট ছিল। বর্তমানে সিডনি ও মেলবোর্নের বিভিন্ন এলাকায় মুসলিম বসতি বিস্তৃত হলেও লাকেম্বার ঐতিহ্যিক গুরুত্ব এখনো অটুট। রমজান মাসে লাকেম্বায় মাসব্যাপী ‘রামাদান ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন এ এলাকার বিশেষত্ব বহন করে। এখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
লাকেম্বায় একাধিক মসজিদ ও মুসাল্লা থাকলেও মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। শুক্রবারের জুমায় জায়গা পাওয়া অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে লাকেম্বার অন্যতম কেন্দ্রস্থলে একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। এ উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংগঠন ইসলামিক প্র্যাকটিস অ্যান্ড দাওয়াহ সার্কেল (আইপিডিসি)। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে মসজিদ, মুসাল্লা ও মাদ্রাসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকলেও লাকেম্বার মতো ব্যয়বহুল এলাকায় মসজিদ নির্মাণ তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রায় শতবর্ষ পুরোনো একটি চার্চ ভবন বিক্রির ঘোষণা পাওয়ার পরই আইপিডিসি উদ্যোগ নেয়। সেপ্টেম্বর মাসে আয়োজন করা ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে প্রথম সপ্তাহেই প্রায় এক লাখ ডলার—প্রায় ৮০ লাখ টাকা—সংগ্রহ হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—শুধু স্থায়ী প্রবাসী নয়, অস্থায়ী ভিসাধারী ও শিক্ষার্থীরাও স্বচ্ছন্দে অনুদান দিয়েছেন। ছাত্রদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে আলোচনায় আসে।
২৭ সেপ্টেম্বর নিলামে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ডলারে (১৫ লাখ ডলার) ভবনটি ও জমি ক্রয় করা হয়—যার আয়তন ৬২০ স্কয়ার মিটার। মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে তিন মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা, শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ নারী, শিশু ও প্রবীণদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হবে। ২০২৬ সালের মধ্যেই মসজিদটি চালু করার লক্ষ্য রয়েছে।
উচ্চমূল্যের এলাকার ভৌগোলিক বাস্তবতায় লাকেম্বায় মসজিদ নির্মাণের চিন্তা দীর্ঘদিন ধরেই কঠিন ছিল। এমন অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই সাহসী উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম কমিউনিটি নির্মাণে নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে।
