দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক জটিলতার ঘন মেঘ কাটতে শুরু করেছে। গণভোট, উচ্চকক্ষে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি এবং শাপলা প্রতীক—এই তিন বড় ইস্যুতে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো। একাধিক দফা সংলাপের পর আজ সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এ বিষয়ে রূপরেখা চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যেও সমঝোতার ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে তাদের আপত্তি নেই। দলটি ইতোমধ্যে ‘শাপলা কলি’ প্রতীককে পছন্দক্রম হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জানিয়ে দিয়েছে।
এদিকে সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ৪৮ সেকেন্ডের প্রথম নির্বাচনী ‘টিজার’ ভিডিওতে আসন্ন ভোটে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এবং একই দিনে সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গণভোটও আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, সংস্কার বাস্তবায়নের সময়সীমা থেকে ‘স্বয়ংক্রিয় অন্তর্ভুক্তি’ বিধান অপসারণ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা—এসব ইস্যুতে ভোটগ্রহণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আজ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট এবং পিআর পদ্ধতি—এই তিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে গত রাতে রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।
রাজনৈতিক অবস্থান ও আলোচনার অগ্রগতি
বিএনপি এখনো উচ্চকক্ষ গঠনে পিআর ব্যবস্থার বিরোধিতা করছে, আর জামায়াত চায় নভেম্বরেই গণভোট হোক। তবে এনসিপি অবস্থান কিছুটা নরম করেছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে মতবিরোধ দেখা দিলে প্রধান উপদেষ্টা চার সদস্যকে সমঝোতা খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন। তারা বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে দু’দফা কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
সরকার দুই দিকেই সমঝোতা চায়—বিএনপিকে পিআর মেনে নেওয়া এবং জামায়াতকে একই দিনে নির্বাচন–গণভোটের ব্যাপারে রাজি করানো। উপদেষ্টা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য এবং ইসিও একই দিনের পক্ষে।
এদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির বিধান বাতিল করে চূড়ান্ত ক্ষমতা সংবিধান সংস্কার পরিষদের হাতে রাখা এবং সভাপতির স্বাক্ষরে আদেশ জারি—এমন বিকল্প ভাবনাও আলোচনায় রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, তাদের স্বাক্ষরিত ১৭ দফা বাস্তবায়ন চাই, কিন্তু ‘জুলাই আদেশ’-এর দায় দল নেবে না। জামায়াত বলছে, আলোচনায় অগ্রগতি থাকলেও প্রকাশ করার মতো কিছু নেই। এনসিপি জানিয়েছে, আইনগত বিষয় নিশ্চিত হলে তারা একই দিনে ভোটে রাজি।
ড. ইউনূস বলেছেন, জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে হবে, কারণ ফ্যাসিবাদী শক্তি বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, মতবিরোধ থাকলেও সেগুলো গুরুতর নয়—একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট এখন বাস্তবসম্মত পথ।







