আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ওই নির্বাচনগুলোর সাক্ষ্য ও তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে যেন কোনো সরকার ভুয়া ভোটের আয়োজন করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। ঢাকার পর চট্টগ্রামে আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর এ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একাধিক নির্দেশনা পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অভিযোগের মুখোমুখি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য ব্যক্তিগতভাবে চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের সদস্য তাজরিয়ান আকরাম হোসেন এবং ড. মো. আব্দুল আলীম শুনানি গ্রহণ করবেন।
আমার দেশ-এর হাতে পাওয়া কয়েকটি চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে যে ‘দি কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’–এর আওতায় ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্থাপিত অভিযোগ বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন ৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে শুনানি চালাবে।
দলিল অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন আসনে দায়িত্ব পালনকারী অন্তত ১০ জন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৫ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১১ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং এজেন্টদের মধ্যে নির্ধারিত সংখ্যাকে শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
২০১৮ সালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বর্তমানে অবসরে আছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, তিনিও বর্তমানে অবসরে আছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন বর্তমানে বরিশালের জেলা প্রশাসক এবং অন্যজন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে যে তাঁরা সবাই শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন।
চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ জানিয়েছেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী শুনানির প্রস্তুতি চলছে এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, এ ধরনের শুনানি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আয়োজন করা হবে। উদ্দেশ্য হলো তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা এবং নির্দেশনা কোন পর্যায় থেকে এসেছিল তা নির্ণয় করা। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অভিযোগ আর না ওঠে, সেই লক্ষ্যে নীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব করা হবে। কমিশন একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ীয় ব্যক্তিদের ভূমিকা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করবে।
