সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ ও উত্তেজনা। গত ২৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র পাঁচ দিন পরই বিএনপিপন্থি চার কমিশনার একযোগে পদত্যাগ করেন। এতে আসন্ন ভোট আয়োজন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই এটিকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেও দেখছেন।
পদত্যাগকারী চার শিক্ষক হলেন—খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক জিএম রবিউল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফ সিদ্দিকী, গণিত বিভাগের অধ্যাপক রেজোয়ান আহমেদ এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনযুর-উল-হায়দার।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন—হবে কি শাকসু নির্বাচন?
কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও ছাত্রদল শাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিপন্থিদের বেশ কিছু কর্মকাণ্ডই নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার ইঙ্গিত দেয়।
প্রায় ১০ মাস ক্যাম্পাসে ব্যানার-ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। সে সময় ছাত্রদল বলেছিল, আগে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে, তারপর নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী ১৪ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেন—নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্ররাজনীতি পুনরায় চালু হয়।
তবে ১৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল জানায়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন ঠিক হবে না। তাদের দাবি, ১০ মাস নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে তারা সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। উপরন্তু, বর্তমানে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলায় এই সময়ে ভোট আয়োজন শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে ফেলবে বলেও মন্তব্য করে তারা।
এদিকে জানা গেছে, অনলাইন মিটিংয়ে বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষক নির্বাচন প্রসঙ্গে উপাচার্যের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।
বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
শিবির সমর্থিত সম্ভাব্য ভিপি প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, “যারা পদত্যাগ করেছেন, তারা জুলাই আন্দোলনের সময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাই তাদের প্রতি আমাদের ভরসা ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ছাত্রদল পরিকল্পিতভাবে শাকসু নির্বাচন ঠেকাতে চাইছে।”
তিনি আরো বলেন, “তারা একের পর এক অজুহাত তুলছে—কখনো রাজনীতি চালু নয়, কখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, আবার এখন বলছে পরীক্ষার সময় মানসিক চাপ তৈরি হবে।”
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আজাদ শিকদার বলেন, “বিএনপিপন্থি চার শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করায় শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এটি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রশাসনকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল, যেন এমন কাউকে কমিশনে না রাখা হয় যারা রাজনৈতিক কারণে মাঝপথে সরে যেতে পারেন। এখন সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, “অভ্যুত্থানের এক বছরের বেশি সময় পরও নির্বাচন আয়োজন না করা জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। নভেম্বর ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এখন বিলম্ব হলে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব ছাত্র নির্বাচনে পড়তে পারে।”
তিনি বিশ্বাস করেন, “কমিশনারদের পদত্যাগে নির্বাচন আয়োজন থেমে থাকবে না। এমনকি পদত্যাগকারী এক কমিশনারও জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন চান।”
ছাত্রদলের প্রতিক্রিয়া
শাবিপ্রবি ছাত্রদল সভাপতি রাহাত জামান বলেন, “কমিশনারদের পদত্যাগ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, এর দায় ছাত্রদলের নয়।”
ইউট্যাবের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউট্যাব (University Teachers Association of Bangladesh) শাবিপ্রবি শাখা নির্বাচনে অসহযোগিতা করতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য ও ইউট্যাব আহ্বায়ক মো. সাজেদুল করিম বলেন, “ইউট্যাব একটি দায়িত্বশীল সংগঠন। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।”







