ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলায় সাতজন চিহ্নিত মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। তদন্তে প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সুজন সরকার, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদারকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর আখতার মোর্শেদ।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানানোয় মাদক কারবারি মেহেদী হাসানের নেতৃত্বাধীন চক্র সাম্যের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এই বিরোধ থেকেই তারা পরিকল্পিতভাবে সাম্যকে আক্রমণ করে। ঘটনার দিন মেহেদী, কবুতর রাব্বি, রিপন, পাপেল, হৃদয়, সোহাগ ও রবিন মিলে সাম্যের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত সাম্যকে তার বন্ধুরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, মাদক বিক্রেতা চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির গেট এলাকায় গাঁজা বিক্রি করে আসছিল। তারা প্রতিদিন বিক্রির টাকা মেহেদী হাসানের কাছে জমা দিত। সাম্য ও তার বন্ধুরা এ কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি হয়। পরে মেহেদী তার সহযোগীদের চাকু ও ইলেকট্রিক ট্রিজারগান সরবরাহ করে এবং প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়।
তদন্তে দেখা যায়, সাম্য হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক চারজন—সুজন, তামিম, সম্রাট ও পলাশ—ঘটনার সময় কেবল পথচারী ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং তারা নিজেরাও সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, “তদন্ত শেষে সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অন্য চারজনের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।”
শাহরিয়ার আলম সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম ১৪ মে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার চার্জশিট দাখিল করা হয় ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্ররাজনীতির অঙ্গনে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে সহপাঠী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি চলেছে।







