পাকিস্তান এয়ারফোর্সের (PAF) গৌরবময় ইতিহাস ও আদর্শে আল্লামা ইকবালের চিন্তাধারার প্রভাব গভীরভাবে প্রোথিত। এয়ারফোর্সের প্রথম এয়ার চিফ মার্শাল আসগর খান উপলব্ধি করেছিলেন— পাকিস্তান এয়ারফোর্স সবসময়ই সংখ্যাগতভাবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে। তাই তিনি ‘Train to fight for unnumbered’ নীতিতে এয়ারফোর্সকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেন।
পরবর্তীতে এয়ার চিফ মার্শাল জামাল আহমেদ খান এই কৌশলকে পিএএফ-এর “অপারেশনাল সেন্ট্রাল আইডিওলজি” হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু এই সামরিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি জুগিয়েছেন কবি আল্লামা ইকবাল। তাঁর কবিতার গভীরতা, আত্ম-উপলব্ধি বা খুদি–এর ধারণা, সংগ্রামী চেতনা ও শ্রেষ্ঠত্বের সাধনা পাকিস্তান এয়ারফোর্সের মতাদর্শে আত্মার প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
ইকবালের কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে PAF যোদ্ধারা বারবার অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। যেমন— ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৫ সালের ৭–১০ মে পর্যন্ত সংঘটিত আকাশযুদ্ধে তারা প্রমাণ করেছেন, “Quantity doesn’t matter” — মানেই সংখ্যাই শক্তির মাপকাঠি নয়, বরং বিশ্বাস, দক্ষতা ও আত্মত্যাগই আসল শক্তি।
আল্লামা ইকবালের কবিতায় বারবার উঠে এসেছে “শাহীন” (ঈগল) প্রতীক, যা পাকিস্তান এয়ারফোর্সের প্রতীক হিসেবেও গৃহীত। শাহীন সাহস, বীরত্ব, দ্রুততা, শিকারের নিপুণতা ও স্বাধীনতার প্রতীক— ঠিক যেমন গুণাবলী পিএএফ যোদ্ধাদের মধ্যেও বিদ্যমান।
ইকবালের রচনায় “জুক-ই-পারওয়াজ” (উড়ার জন্য আবেগ), “লাজ্জাত-ই-পারওয়াজ” (উড়ার আনন্দ), “উকাবি-রুহ” (অদম্য আত্মা) এবং “উসাত-ই-আফলাক” (সীমাহীন আকাশ)— এসব শব্দগুচ্ছ পাকিস্তান এয়ারফোর্সের মানসিক দৃঢ়তা ও অনুপ্রেরণার ভিত্তি হয়ে আছে।
ইসলামি রাজনীতি সম্পর্কে ইকবালের এক বিখ্যাত উক্তি আজও গভীরভাবে অনুরণিত—
“দ্বীন আগার জুদা হোতা হ্যায় সিয়াসত সে, রেহ যাতা হ্যায় চেঙ্গিজী”
অর্থাৎ “ধর্ম যদি রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তবে তা হয়ে যায় কেবল চেঙ্গিসের বর্বরতা।”
আজ আল্লামা ইকবালের জন্মদিনে পাকিস্তানসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে সেই কবিকে— যিনি চিন্তা, চেতনা ও আত্মশক্তির মাধ্যমে জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।







