রাজশাহীতে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২৮ জন নারী-পুরুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বলছে—প্রতি বছরই এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২৫ সালে তা মারাত্মক মাত্রা পেয়েছে।
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি (টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং) সেন্টার–সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানান, রাজশাহীতে যৌনকর্মীর চেয়ে সমকামিতার মাধ্যমে এইচআইভি ছড়িয়েছে বেশি। ২০১৯ সালে পরীক্ষায় কেউ পজিটিভ না থাকলেও, পরবর্তী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩–এ। এ সময়ে এইডসে মারা গেছেন আটজন।
হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন এইচআইভি পরীক্ষার জন্য আসেন। এখানে শুধুমাত্র পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়, ওষুধের ব্যবস্থা নেই। আক্রান্তদের চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে যেতে হয় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রামেকে এআরটি সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে রোগীরা রাজশাহীতেই ওষুধ পেতে পারেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২৭ জন পজিটিভ রোগীর মধ্যে ১৬ জন সমকামিতার মাধ্যমে এবং ১০ জন যৌনকর্মী মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। ২০২৫ সালে ২৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৭ জন সমকামিতার মাধ্যমে সংক্রমিত। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি।
এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সিলরদের ভাষ্য, পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পরে অনেক রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আত্মহননের চিন্তা ও অন্যকে সংক্রমিত করার ইচ্ছাও অনেকের মধ্যে কাজ করে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা, সতর্কতা ও মানসিক সহায়তা দেওয়া হয়।
রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, অরক্ষিত যৌনসম্পর্ক—চাই তা নারী-পুরুষে হোক বা পুরুষে-পুরুষে—এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান কারণ। এছাড়া মা থেকে সন্তানেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। সচেতনতা, কনডম ব্যবহার, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়িয়ে চলা, নিরাপদ রক্ত গ্রহণ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এইচআইভি প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।







