আগামী জানুয়ারি থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা–করাচি–ঢাকা রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে। প্রায় ১৩ বছর বন্ধ থাকার পর রুটটি পুনরায় চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বিমানের আসন্ন বোর্ড মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
একসময় ঢাকা–করাচি রুট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য লাভজনক ছিল। দুই শহরের দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় যাত্রীদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ট্রানজিট নিতে হতো, ফলে সময় ও ব্যয়—দুটোই বৃদ্ধি পেত। পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় করাচি পৌঁছানো যাবে। এতে দুই দেশের বাণিজ্য, শ্রমবাজার, ট্রানজিট ও সরাসরি যোগাযোগে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসা, শিক্ষা ও শ্রমবাজারের কারণে করাচি একসময় বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য ছিল। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১২ সালে রুটটি বন্ধ করা হয়। আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে এবার আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বেবিচক জানায়, যাত্রী চাহিদা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, শ্রমবাজারে সংযোগ এবং করাচির শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক ও পাকিস্তান সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক নাদির শাফি দারের মধ্যে ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
বিমান কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সপ্তাহে দুই দিন ঢাকা–করাচি–ঢাকা রুটে ফ্লাইট চলবে। যাত্রী চাহিদা বাড়লে ভবিষ্যতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে অনুমোদনসংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে। শুধু পাকিস্তান সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ নয়, করাচির জিন্নাহ এয়ারপোর্ট অথরিটিরও অনুমতি প্রয়োজন, যা সময়সাপেক্ষ। পাশাপাশি মার্কেটিং–সংক্রান্ত প্রস্তুতিও বাকি থাকায় জানুয়ারির আগে ফ্লাইট চালু করা সম্ভব নয়। এই রুটে বোয়িং ৭৩৭–৮০০ বিমান ব্যবহার করা হবে। করাচি থেকে অনেক যাত্রী ঢাকা হয়ে ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে যেতে পারবেন, ফলে তাদের সময় ও খরচ—উভয়ই কমবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই রুট পুনরায় চালু হওয়া আঞ্চলিক সংযোগের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে। বিশেষ করে বাণিজ্য, পর্যটন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার বোশরা ইসলাম জানিয়েছেন, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে এবং যেকোনো সময় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুই দেশের বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।
