ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরের সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা ও অশোভন আচরণ করেন হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ও ওটি ইনচার্জ এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মন। ঘটনার পর তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) জারি করা হয়।
ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার দুপুরে হাসপাতাল পরিদর্শনের সময়। জরুরি বিভাগের সেবার মান, রোগী ব্যবস্থাপনা ও স্টাফদের উপস্থিতি নিয়ে ডিজি প্রশ্ন তুললে ডা. ধনদেব উত্তেজিত হয়ে উচ্চকণ্ঠে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ডিজির প্রতি অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করেন। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস বিষয়টি সরকারি বিধিবিধান পরিপন্থী বিবেচনা করে বিকেল চারটার দিকে তাৎক্ষণিকভাবে শোকজ নোটিশ জারি করেন।
রোববার বেলা ১১টার দিকে ডা. ধনদেব শোকজের জবাব জমা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ডিজি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। আমার আচরণটি অনুপযুক্ত ছিল, তাই আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি।”
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাইনুদ্দিন বলেন, শোকজের জবাব পর্যালোচনা শেষে কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
ঘটনার পর শনিবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ডা. ধনদেব নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডিজিকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন, যা নিয়ে অনলাইনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কয়েকটি সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টাও দেখা যায়। তবে হাসপাতালের কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ পেশাগত শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয় হিসেবে দেখছেন।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. ধনদেবের কর্মজীবনে দীর্ঘদিন ধরে পেশাগত বিভিন্ন অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি কখনো ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা দেননি, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেননি এবং বাধ্যতামূলক ফাউন্ডেশন ট্রেনিংও সম্পন্ন করেননি। পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) জমা দিতেও তিনি নিয়মিত ব্যর্থ ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ১৭ বছরে পদোন্নতির নিয়মিত কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি ডা. ধনদেব। আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে তার সাম্প্রতিক পদোন্নতিও বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে এমএস ডিগ্রি অর্জন করার পরও তার পদোন্নতি বিলম্বের বিষয়ে সহকর্মীরা জানান, ময়মনসিংহে অবস্থান করে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে অপারেশন চালিয়ে যাওয়ার সুবিধা হারানোর আশঙ্কায় তিনি নিয়মিত পদোন্নতির আবেদন বা পরীক্ষা এড়িয়ে গিয়েছেন। পদোন্নতি পেলে বদলি বা অন্য কর্মস্থলে যোগ দিতে হতে পারে—এমন আশঙ্কাই তার অনীহারের কারণ ছিল বলে তারা বলেন।






