বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ ১৪ বছরের ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালু করতে যাচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ভারতের ‘টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস’ (TCS) এর নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ডের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং সার্ভার অ্যাক্সেস ছিল বিদেশি হাতে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা সার্ভার অপারেশন, ডাটাবেস অ্যাডমিন, এনক্রিপ্টেড ফাইল সিস্টেম এবং পাসওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত পূর্ণ প্রবেশাধিকার ব্যবহার করতেন। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল নজিরবিহীন।
অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিজের সুবিধা ও কমিশনের লোভে দেশীয় সফটওয়্যার তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করতেন। এই সময় টিসিএস লাইসেন্স রিনিউ, পরামর্শক ফি ও মেইনটেন্যান্সের নামে ১০০০ কোটি টাকারও বেশি টাকা ভারত থেকে নিয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার ত্রুটি, তথ্য গোপন রাখা ও দেশের আর্থিক তথ্যে বিদেশি নজরদারি চলার বিষয়টি ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনাতেও আলোচনায় আসে।

দেশের নিজস্ব সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আইসিটি বিভাগের ইয়াং টেকনোলজি এক্সপার্টরা নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা ৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সফটওয়্যার চালু করবে। নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে:
- বছরে শত কোটি টাকার অপচয় বন্ধ হবে এবং মেইনটেন্যান্স খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যাবে।
- দেশের আর্থিক তথ্যের ওপর পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে, ভারতীয় নজরদারির সুযোগ থাকবে না।
- নীতি ও সিস্টেম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতের ‘সাইবার সার্বভৌমত্ব’ পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের আর্থিক স্বাধীনতা ও তথ্য সুরক্ষায় এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন।







