ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি গতকাল শুক্রবার সন্ত্রাসীর গুলিতে গুরুতর আহত হন। সংকটাপন্ন অবস্থায় তিনি বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পর বেরিয়ে এসেছে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জুলাই যোদ্ধার ওপর পরিকল্পিত ‘টার্গেট কিলিং’-এর স্পর্শকাতর তথ্য, যা আগেই সরকারকে জানানো হয়েছিল, কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, কিলিং টার্গেটের তালিকায় হাদির পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন জুলাই সংগঠকের নাম রয়েছে। এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক আইনজীবীর মাধ্যমে পাওয়া যায় এবং তা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকি হাদি নিজেসহ তিন জুলাই যোদ্ধা হুমকির বিষয়টি সরাসরি সরকারের নজরে আনেন বলেও জানা গেছে।
ওই আইনজীবী সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে তার হাতে আসা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত ও তথ্যপ্রাপ্তির নির্দিষ্ট সূত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, পেশাগত কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকায় এসব স্পর্শকাতর তথ্য তার কাছে এসেছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে—এমন সতর্কবার্তাও দেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে হামলার তথ্য পেয়ে আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ালেও সমস্যার সমাধান হয় না। মাঠের রাজনীতিতে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা বাস্তবসম্মত নয়।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান, বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
সূত্র আরও জানায়, হাদি, ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও হাসনাত আবদুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলার তথ্য পাওয়ার পর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় এসে তাঁদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হলে বডিগার্ড নেওয়ার প্রস্তাব আসে। তবে মাঠের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা সেই প্রস্তাবে সম্মত হননি।
হাদির ওপর হামলার পর আইনজীবীটি বলেন, “বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সূত্রে পাওয়া তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় সব পক্ষকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হামলা ঠেকানো যায়নি। অন্যদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি রয়ে গেছে।”
এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং আইজিপি বাহারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলে রাত ১২টায় আইজিপি ফিরতি বার্তায় জানান, “এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।”
পুলিশ সূত্র জানায়, হাদির ওপর হামলায় বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। ভাড়াটে কিলার ফিলিপ ওরফে গারো ফিলিপের নাম উঠে এসেছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ফিলিপ ধরা পড়লে কিলিং মিশনের নেপথ্যের হোতাদের পরিচয় পাওয়া যাবে বলে আশা পুলিশের।






