ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার একদিন পরই ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় আগ্রাসন ও আওয়ামী লীগের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত হাদির ওপর এই হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, শরিফ ওসমান হাদিসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জুলাই যোদ্ধার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা হতে পারে—এমন স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আগেই সরকারকে জানানো হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ বিষয়ে পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, টার্গেট কিলিংয়ের তালিকায় হাদির পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন জুলাই সংগঠকের নাম ছিল। তাদের ওপর হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্যও পাওয়া গিয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক আইনজীবীর সূত্রে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। ওই সময় তা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এবং উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকি শরিফ ওসমান হাদিসহ তিনজন জুলাই যোদ্ধা নিজেরাই হুমকির বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই আইনজীবীও একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
সূত্র আরও জানায়, ওই আইনজীবী সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে তার হাতে আসা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত এবং তথ্যপ্রাপ্তির নির্দিষ্ট সূত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, পেশাগত কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকায় এসব স্পর্শকাতর তথ্য তার কাছে এসেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কাও তিনি তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে হামলার তথ্য পেয়ে আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হয় না। বর্তমান বাস্তবতায় পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করাও সম্ভব নয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছি—নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। লোক দেখানো অভিযান সবার জন্যই আত্মঘাতী হতে পারে।”
সূত্র জানায়, হাদি, ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ জুলাই সংগঠকদের ওপর হামলার তথ্য পাওয়ার পর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় আসেন। সেপ্টেম্বরে তিনি তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। পরে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হলে বডিগার্ড বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে মাঠের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে তারা সে প্রস্তাবে সম্মত হননি। আগাম তথ্য দেওয়া ওই আইনজীবী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।







