লড়াকু ছাত্রদেরকে বর্তমানের উপদেষ্টা পরিষদ ভুল পথে পরিচালিত করছে’ অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তিনজন যারা (ছাত্র) ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদে মন্ত্রীর মর্যাদায়। তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তারা চেয়ারে বসার পর তাদের আত্মীয়-স্বজনরা সব তার মন্ত্রণালয় লাইসেন্স করা শুরু করেছে। এতে করে দেশের ক্ষতি হলো, তাদের ক্ষতি হলো। এই ছাত্রদেরকে উপদেষ্টা করা বিরাট এক ভুল হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যে ছাত্র সমাজ আছে, তাদের উচিত লেখাপড়া শেষ করে নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তারপর নিজেদের পেশায় আত্মনিয়োগ করা। রাজনীতি করার জন্য উন্মুক্ত দরজা আপনাদের আছে। সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন, তারপর রাজনীতি করুন। আপনারা আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট হোন। কিন্তু এখন বারবার তদবির করে, মবক্রেসি করে সচিবালয়ে হাজির হয়ে অটো পাশের দাবিতে হুমকি দেন যে, আপনাদেরকে ডিগ্রি দিতে হবে; এটা আপনাদের জন্য সম্মানজনক নয়।
রোববার (১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ দলের উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ বলেন, বর্তমানে এই লড়াকু ছাত্রদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে বর্তমানের এই উপদেষ্টা পরিষদ। এই উপদেষ্টা পরিষদ ছাত্রদেরকে লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। দু-তিনজন যারা (ছাত্র) ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদে মন্ত্রীর মর্যাদায়। তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তারা চেয়ারে বসার পর তাদের আত্মীয়-স্বজনরা সব তার মন্ত্রণালয় লাইসেন্স করা শুরু করেছে। এতে করে দেশের ক্ষতি হলো, তাদের ক্ষতি হলো। এই ছাত্রদেরকে উপদেষ্টা করা বিরাট এক ভুল হয়েছে। তারা যে রাজনৈতিক দলটা গড়েছে, এটি কিন্তু আগামী দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হতে পারত। তারা যদি দল সৃষ্টি করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত, রাজনীতিতে সুবাতাস বইয়ে দেয়ার চেষ্টা করত, তাহলে তাদের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হতো। কিন্তু অল্প বয়সে তাদেরকে এই মন্ত্রী পরিষদে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে নষ্ট করে দেওয়া হল।
তিনি আরও বলেন, হাসিনার শাসনামলে এই দেশটি ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়েছে। আমি এই দেশের ছাত্রদের এবং সাধারণ নাগরিকদের অভিনন্দন জানাই। জীবনের বিনিময়ে দেড় হাজার ছাত্র যুবক সাধারণ মানুষের জীবনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আবার মুক্ত হয়েছি। এই যুদ্ধে প্রতিটি মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করে তারা এ দেশকে আবার নতুন করে স্বাধীন করেছে। আবার একটি রাজনৈতিক দল যারা একাত্তরের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তারা বলতে চায় একাত্তরে আমরা নাকি ভুল করেছিলাম। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে ৭১ এ ভুল করেছিলাম? এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হব, এটা কখনো চিন্তাও করিনি। যেই বীররা ৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধ করেছে, যারা যুদ্ধের মাঠে ছিল না, তারা তো এটি অবলোকন করে নাই। বুঝতেও পারে নাই। তাই আজকে এই ধরনের কথা বলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ ভালো লাগেনা, তাই সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা আকাশে বাতাসে বলে বেড়াচ্ছে। ৭২ এর সংবিধান ছুঁড়ে ফেলার কথা বলছে। সংবিধান তো যেকোনো নির্বাচিত সরকার পরিবর্তন করতে পারে। আমূল পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু একাত্তরের গন্ধ আছে, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা এর সাথে জড়িত ছিল, এজন্য একাত্তরের কোন কিছুই এখানে অনেকের ভালো লাগেনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে এখন একদল মতলববাজ খেলছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি বাইরের পৃথিবীতে একটি পরাশক্তি তারা বার্মায় এক্সপোর্টাইজড করেছে। এখন আমাদের দেশে একটি মানবিক করিডরের নামে কিছু অংশ আমাদের হাত থেকে বেহাত হয়ে যাবে। শুনতে পাচ্ছি এখানে খ্রিস্টান কাম ইহুদী রাষ্ট্র গঠিত হবে, আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের অঞ্চল নিয়ে। এসব নতুন নতুন থিওরি কারা দিচ্ছে? বিশ্বাস হয়নি, কিন্তু একদিন শুনলাম আমাদের বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তিনি বলেছেন যে এখানে মানবিক করিডোর দেওয়া হবে। পরবর্তীতে যখন জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ধুমায়িত হয়ে ওঠে, তখন আরেক উপদেষ্টা বলেন যে এই ব্যাপারে এখনো কোন আলাপ আলোচনা হয়নি।
মেজর হাফিজ বলেন, যার যতগুলো পিএইচডি ডিগ্রীই থাকুক, কিন্তু জনগণের সম্মতি ছাড়া এখানে কোনধরনের যুদ্ধে বাংলাদেশকে লিপ্ত করা যাবে না। এখানে যা কিছু হবে, যা কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচন পার্লামেন্ট করবে। দ্রুত নির্বাচন দেন, এই দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই দেশের সকল সংস্কার করবে।
প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশাহত করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ড. ইউনূস দেশের কৃতি সন্তান, দেশের গৌরব। আমরা তাকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছি, ভবিষ্যতেও দিব। কিন্তু তিনি আমাদেরকে আশাহত করেছেন। বিশেষ করে উনি যে অসত্য কথা বলবেন, এটা তো আমরা কল্পনাও করি না। তাও বলেছেন বিদেশে। জাপানে গিয়ে তিনি বলেছেন, একটা মাত্র দল বিএনপি যারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এটা কি সত্য? ৪২টি দল তার সামনে গিয়ে বলেছেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। ফেব্রুয়ারি মাসের সব রাজনৈতিক দলের সাথে একটি আলোচনায় তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নিজেই বলেছেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। দুই-তিন দিন পরে এটা পরিবর্তন হয়ে গেল। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়! তার যে কয়েকটা উপদেষ্টা আছে, প্রেসসচিব আছে, বিভিন্ন সচিব কিংবা যাকে আশেপাশে রেখেছেন, এরা তো মনে হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার থেকেও বেশি রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির চেয়ারপারসন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, এবি পার্টি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।