ঈদুল আজহার আর মাত্র একদিন বাকি। রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি কোরবানির পশুরহাট এখন জমজমাট। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও ক্রেতারা ভিড় করছেন হাটে। হালকা বৃষ্টি, কাদামাখা পথঘাট কিছুই যেন ঠেকাতে পারছে না কোরবানির পশু কেনার উৎসাহে। ক্রেতা জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোর মতো এবার পশুরহাটে দুর্নীতিবাজ, আমলা ও রাজনীতিবিদদের দাপট নেই। অনেকটাই স্বস্তিতে কোরবানির পশু কেনাকাটা করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, দুর্নীতিবাজ, আমলা ও রাজনীতিবিদদের অনুপস্থিতিতে পশুরহাটে এর প্রভাব পড়েছে। এতে এবার বড় গরুর দাম একেবারেই কম বিক্রি হচ্ছে। দামও পড়ে গেছে। ছোট-মাঝারি গরুর তুলনায় বড় গরুর দাম খুবই কম। কেরানিগঞ্জ মডেল টাউনের বাসিন্দা নজিবুল্লাহ বলেন, বর্তমান বাজারে ছোট-মাঝারি গরুর মাংসের দাম পড়বে সাতশো থেকে আটশো টাকা। সেখানে বড় গরুর মাংসের দাম পড়বে সাড়ে চারশো থেকে সাড়ে চারশোর মধ্যে।
এর করণ হিসেবে তিনি বলেন, অবৈধ সম্পদের মালিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবার পলাতক কিংবা আত্মগোপনে রয়েছেন। এ ছাড়াও সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আমলাদের বিশাল একটা অংশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ফলে বরাবর যেখানে আমলাদের একটা বড় অংশ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড় গরু কেনার প্রতিযোগিতা করতেন এবার সেটা নেই। বিশেষ করে গত বছরের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তৎকালীন সদস্য মতিউর রহমানের ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় এর প্রভাব পড়েছে আমলাদের মধ্যে। যে কারণে দুর্নীতিবাজ আমলারাও এবার সতর্ক অবস্থানে থেকে ছোট ও মাঝারি গরু কেনায় ব্যস্ত।
বিগত দেড় যুগে দেখা গেছে, বড় রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ বড় বড় আমলারাও ধর্মীয় নির্দেশনা পালনের চেয়ে দলীয় কর্মীদের তুষ্ট রাখার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বিশালাকৃতির এক বা একাধিক গরু-মহিষ কোরবানি দিয়ে মাংস বিতরণ করে নিজের বড়ত্ব জাহির করতেন। তারা বড় গরু কোরবানি নিয়েও করতেন প্রতিযোগিতা। কিন্তু এবার সেই অবস্থা নেই। যার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বড় গরুর দামে।
অবশ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও তা স্বীকার করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় নেই, আর দুর্নীতিবাজরাও নেই বলেই অনেকের হাতে গরু কেনার মতো অর্থ নেই। এ ছাড়া গরুর সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এবার কোরবানির পশুর বাজারে দামও কিছুটা কমেছে।
বৃহস্পতিবার কেরানিগঞ্জের কোরবানির হাট ঘুরে দৃশ্য দেখা গেছে, হাটে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছোট গরুর। হাটে ছোট গরুর দাম বেশি হলেও বিক্রেতারা ছাড়ছেন না, তাদের ধারণা শেষ মুহূর্তে হয়ত চাহিদা ও দাম আরও বাড়বে। ক্রেতারাও শেষ মুহূর্তের অপেক্ষায় আছেন, তারা মনে করেন শেষের দিন পশুর দাম কম হতে পারে। এদিকে ছাগল ও ভেড়ার বাজারও কম জমজমাট নয়।
ব্যাপারী ও ক্রেতা দু’পক্ষই বলছেন, এ বছর ছোট গরুর চাহিদা অনেক বেশি। ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকার গরুর সামনে ভিড় করছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। বিক্রেতারা বলছেন, পশু লালনপালনে খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, এবার হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু রয়েছে। তুলনামূলক দামও কম। যদিও ব্যাপারীরা দাম ধরে রাখতে চাইছেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা গরুর ব্যাপারি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ছোট হোক আর বড়, পশু লালন-পালনের খরচ তো কমেনি। গো-খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যাতায়াত খরচও বেশি। তাই কম দামে তো বিক্রি করা সম্ভব না।
এই হাটে আসা আরেক ব্যাপারী নেত্রকোণার আলমাস বলেন, আগে ৫০-৫৫ হাজারে যে গরু বিক্রি করতাম, এখন সেটা ৬৫-৭০ হাজারেও ছাড়া যাচ্ছে না। ছোট গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি রাখতে পারছি।
ছোট গরুর পাশাপাশি মাঝারি আকারের গরুর চাহিদাও রয়েছে। এসব গরুর দাম ১ লাখ থেকে শুরু করে ১ লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। হাটে ক্রেতারা বলছেন, বড় গরুর দিকে না গিয়ে মাঝারি গরুতেই এবার ঝুঁকছেন তারা।
এক লাখ ষাট হাজার টাকায় কালো রঙের একটি ষাঁড় গরু কিনে কেরানিগঞ্জ মডেল টাউনে ফিরছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘বড় গরু নিলে কাটাকাটি, ভাগ করা সমস্যা। মাঝারি গরুতেই স্বস্তি। কিন্তু এটাও এখন হাতের নাগালে নেই।
এদিকে গরুর পাশাপাশি ছাগল ও ভেড়ার বাজারও জমজমাট। বিশেষ করে ছোট ছাগলের সামনে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। ছোট আকারের ছাগল ৮ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও বড় ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়।