এবার রাজধানীতে হতে যাচ্ছে বিচার বিভাগীয় সম্মেলন। এর আগে সাত বিভাগে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২২ জুন অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে পারেন।
সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে তার রোডম্যাপের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরবেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান বিচারপতি ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় রোডম্যাপ তুলে ধরেন। বিচার বিভাগের সংস্কারে তার এ রোডম্যাপের ওপর সারা দেশে মোট ৯টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারগুলোতে অংশ নিয়ে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছিলেন, বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ততদিন পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না, যতদিন না বিচার বিভাগে দীর্ঘদিন বিরাজমান দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার সম্পূর্ণ বিলোপ করে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটি হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রথম ধাপ। বিচার বিভাগ সংস্কার না করলে কোনো সেক্টরের সংস্কার স্থায়ী হবে না।
প্রধান বিচারপতি সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংবিধানের কোনো সংশোধন না করেই শুধু রুলস অব বিজনেস সংশোধনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেন। যার মধ্যে রয়েছে—বিচারক নিয়োগ, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, বরখাস্ত, শৃঙ্খলা বিধান ইত্যাদি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ ঘোষণার ১০ মাসের মাথায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয়ের ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। এটি বিচার বিভাগের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আমার দেশকে বলেন, বিচার বিভাগের সংস্কার বর্তমানে সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বিচার বিভাগের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতার মাধ্যমেই পলাতক হাসিনা একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল। বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চেষ্টা করছেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা আইনজীবীদের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির এ উদ্যোগের সঙ্গে আছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি ইত্যাদি বিষয়ে প্রচলিত দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটবে এবং বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতাও সচিবালয়ের হাতে আসবে।
ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমনÑবিচারক নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ ছাড়া বিচারকদের বদলি, পদোন্নতির খসড়া নীতিমালা একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে। এতে তারা স্বাধীনভাবে বিচারিক ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।