একমাত্র সন্তান সাগর আহমেদকে নিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বী। ছেলেও বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের পথেই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলি তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল। এরপর থেকে শোকে মুহ্যমান বাবা-মা। যখনই ছেলের কথা মনে পড়ে তখনই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
জানা যায়, সাগর ঢাকার মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেন। জুলাই বিপ্লবে ১৮ জুলাই শাহবাগে প্রথম গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে আবার তিনি আন্দোলনে যোগ দেন। সেদিন তাকে কাছ থেকে গুলি করে পুলিশ। গুলি তার চোখ ভেদ করে মাথার পেছন দিয়ে মাংসপিণ্ডসহ বেরিয়ে যায়। পুলিশ সরে গেলে সাগরের এক সহযোদ্ধা জিয়া, সাগরের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন থেকে তার গুলি লাগার সংবাদ বাড়িতে জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে সাগরকে আজমল প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে ফিরিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাগরের বাবা তোফাজ্জেল মণ্ডল জানান, ২০ জুলাই সাগরের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নারুয়ায় আনার পর পুলিশের চাপ ছিল তাড়াতাড়ি লাশ দাফনের। বাদ আসর জানাজা পড়ানোর সময় নির্ধারণ করে মাইকিং হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং দলটির নারুয়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের চাপে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তাকে দাফন করতে হয়। এখন তার কথা মনে পড়লেই কান্না আসে। তার মাও কাঁদে, থামানো যায় না। তাকে নিয়ে আমাদের সব স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল। এখন আমাদের চাওয়া দোষীদের শাস্তি।
সাগরের মা গোলাপী বেগম বলেন, ১৯ জুলাই ছিল শুক্রবার। সকাল ১০টার দিকে এক হাজার টাকা পাঠাতে বলে সে। তাকে টাকা পাঠিয়ে বলি, কোনো ঝামেলায় জড়াস না। ছেলে বলেছে, তার জন্য দোয়া করতে। এ কথাই ছেলের সঙ্গে শেষ কথা। এই কথা বলতে বলতেই মূর্ছা যান তিনি।