বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা ইশরাককে মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার কর্মী-সমর্থকদের টানা ৩৯ দিন ধরে চলা আন্দোলনে অচল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যালয় নগর ভবন। তবে এবার আন্দোলনের আওতা কিছুটা শিথিল করার চিন্তা করছেন ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা আন্দোলনকারীরা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কিছু তালা খুলে দেওয়ার চিন্তা করছেন তারা। তবে ডিএসসিসির প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষের তালা না খোলার সিদ্ধান্তে অটল তারা। তাদের ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ উল্লেখ করে নগর ভবনে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক অনুসারীরা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে নগর ভবনে চলমান আন্দোলনে ইশরাকও আর যোগ দিচ্ছেন না। এমনকি অবস্থান কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সংখ্যাও সীমিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে ইশরাক ব্যতীত কর্মসূচিতে ডিএসসিসির আঞ্চলিক অফিসসহ নাগরিক সেবা চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিজ কাজে ফেরা আহ্বান জানানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গতকাল রোববার তার সমর্থক এবং কর্মচারীদের একটা অংশ আন্দোলন করেছেন। কিন্তু বিগত দিনের তুলনায় আন্দোলনকারীদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। এর আগে সকাল থেকে নগর ভবনের সামনে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আসতে শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা সীমিতসংখ্যক হওয়ায় তারা নগর ভবনের সিঁড়িতেই অবস্থান করেন।
৩৯ দিন পরে খুলছে কিছু তালা
নগর ভবনের কিছু কক্ষের তালা আজ সোমবার খুলে দেওয়া হবে। শুধু থাকবে প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষের তালাগুলো। নগর ভবনসহ আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে গত ১৪ মে একটি করে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করা হয়। ঢাকাবাসীর ব্যানারে করা আন্দোলনকারীরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের কোনো বিল ছাড় দিতে দেবেন না বলেও জানান। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট আমলের দোসরদেরও নগর ভবন এবং আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। একই সঙ্গে নতুন করে কোনো নিয়োগ দিতে গেলেও তা প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
গতকাল রোববার দুপুরে নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক অফিসসহ নাগরিক সেবা চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মরতদের নিজ নিজ কাজে ফিরে যেতে আহ্বান জানানো হয়। ঢাকাবাসীর ব্যানারে করা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহমান এই আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ না করিয়ে আদালত ও সংবিধান অমান্য করায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অপসারণ দাবি করেন তিনি।
দেড় মাস ধরে অচল ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবন
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ঢাকাবাসীর ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ রেখেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১৫ মে থেকে ২২ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ। জরুরি প্রয়োজনে এসে সেবাপ্রার্থী নাগরিকদের বারবার ঘুরে যেতে হয়েছে। সেই সময় দক্ষিণ সিটির ইশরাকপন্থি কর্মচারীরা নগর ভবনের মূল ফটক আটকে রাখার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে রাখেন। পরে ঈদের বিরতির পর গত ১৫ জুন থেকে ফের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। গতকাল রোববার সকাল থেকে নগর ভবনের সামনে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আসতে শুরু করেন। বেলা ১১টা থেকে ঢাকাবাসীর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।